বার্তাটি আমি পৃথিবীতে পাঠাচ্ছি সবাইকে সতর্ক করার জন্য। আপনি হয়তো আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, সতর্কবার্তাটা কিসের? সে ক্ষেত্রে বলব, আমার মনে হচ্ছে, খুব শিগগির কিছু একটা ঘটবে। অবশ্যই ঘটবে। ব্যাপারটা ভাবলেই বিষাদে ছেয়ে ওঠে মন। সে জন্য কেউই ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলতে চায় না। কিন্তু বলা উচিত। তাহলে পৃথিবীর মানুষেরা সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারবে।
একুশ শতকের শেষার্ধ্বে পৃথিবীর চারপাশে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘূর্ণমান উপনিবেশের সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ১২। প্রতিটিই আবার নিজস্ব আঙ্গিকে একেকটি স্বাধীন জগৎ। এর মধ্যে সবচেয়ে ছোট উপনিবেশটায় অধিবাসীর সংখ্যা ১০ হাজার। আর সবচেয়ে বড়টিতে প্রায় ২৫ হাজার। আমি নিশ্চিত, পৃথিবীর সব মানুষ এ তথ্য জানে। কিন্তু সবাই নিজেদের বিপুলা পৃথিবী নিয়ে এত মশগুল যে আমাদের মতো ক্ষুদ্র, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ভাবারই সময় পায় না।
প্রতিটি উপনিবেশ পৃথিবীর পরিবেশকে যথাসম্ভব অনুকরণের চেষ্টা করে চলেছে। কৃত্রিম মহাকর্ষ বল তৈরি করার জন্য ঘুরে চলেছে নিজের অক্ষের ওপর। স্বাভাবিক দিন ও রাত নির্ধারণের জন্য সূর্যের আলো নির্দিষ্ট সময় প্রবেশ করতে দিয়ে বাকি সময় বন্ধ করে রাখছে। প্রতিটি উপনিবেশই যথেষ্ট বড়। ভেতরে বিশাল সব খামার ও কারখানা বসানোর মতো জায়গা আছে। বায়ুমণ্ডল এমন, যেন মেঘও তৈরি হয়। শহর আছে, স্কুল আছে, আছে খেলার মাঠ।
তবে আমাদের এমন কিছু জিনিস আছে, যা আসল পৃথিবীতে নেই। প্রতিটি উপনিবেশেই কৃত্রিম মহাকর্ষ বলের তীব্রতা একেক জায়গায় একেক রকম। কোথাও মহাকর্ষের তীব্রতা একদম কম, কোথাও কোথাও তো একদম শূন্য। সেখানে আমরা নিজেদের মতো ডানা লাগিয়ে উড়তেও পারি। চাইলে ত্রিমাত্রিক টেনিসও খেলা যায়। অদ্ভুত রকম সব ব্যায়ামও করতে পারবে কেউ চাইলে।
মহাকাশের সঙ্গে আমরা এতটাই পরিচিত যে বিষয়টি আমাদের সভ্যতার অংশ হয়ে গেছে। উপনিবেশ ঠিকমতো পরিচালনার পাশাপাশি আমাদের প্রধান কাজ হচ্ছে মহাকাশে পৃথিবী এবং আমাদের নিজেদের জন্য বিভিন্ন কাঠামো বানানো ও প্রস্তুত করা। আমরা মহাকাশে কাজ করি। নভোযান ও নভোচারীদের স্পেসস্যুট সম্পর্কে জানি হাতের উল্টো পিঠের মতো। বিনা অভিকর্ষে কাজ করার অভ্যাস আমাদের একদম ছোটবেলা থেকেই।
অন্যদিকে আসল পৃথিবীতে এমন অনেক কিছু আছে, যা আমাদের নেই। পৃথিবীর মতো আমরা কখনো আবহাওয়াজনিত বিরূপ অবস্থার সম্মুখীন হই না। আমাদের আবহাওয়া একদম নিয়ন্ত্রিত। অতিরিক্ত গরম বা শীত, কোনোটাই নেই। ঝড় হয় না কখনো। আমরা প্রয়োজনমাফিক জল ঝরাই আকাশ থেকে।
সূর্যই আমাদের শক্তির মূল উৎস। এমনকি বাড়তি শক্তি আমরা পৃথিবীতে রপ্তানিও করি। খুব সহজেই উৎপাদন করতে পারি ফসল। উদ্বৃত্তটুকু পাঠিয়ে দিই পৃথিবীতে। মাংসের চাহিদা পূরণের জন্য আমাদের এখানে আছে খরগোশ ও মুরগির মতো ছোট ছোট প্রাণী।
পৃথিবীর মতো বিপৎসংকুল ভূখণ্ডও নেই এখানে। নেই পাহাড়, খাদ, জলাভূমি বা মরুভূমি। উত্তাল সমুদ্র কখনো চোখে পড়ে না। তা ছাড়া আমাদের উপনিবেশে কোনো বিপজ্জনক পশু, গাছ কিংবা পরজীবীও নেই। বরং আমাদের অনেকে তো অভিযোগ করে যে আমরা বড্ড বেশি নির্ঝঞ্ঝাট জীবন যাপন করি। তবে হ্যাঁ, আমরা চাইলেই ঘুরে আসতে পারি মহাকাশ থেকে। সুদূর মঙ্গল গ্রহেও চলে যেতে পারি লম্বা সময়ের জন্য। আপনারা পৃথিবীবাসী সে জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত নন। এমনকি উপনিবেশবাসী অনেকে তো মঙ্গল গ্রহে কলোনি স্থাপনের চিন্তাভাবনা করছে। গ্রহাণুগুলোতে খনি খুঁজে বের করার পরিকল্পনাও চলছে। কিন্তু সেটার হয়তো দরকারই পড়বে না। কারণগুলো বলছি।
এই উপনিবেশগুলো যে মানবসভ্যতার অজান্তে স্থাপিত হয়েছে, এমন কিন্তু নয়। এই তো, মাত্র এক শতাব্দী আগে প্রিন্সটনের জেরার্ড ও’নিল এবং তাঁর ছাত্রছাত্রীরা মানবজাতির জন্য এ রকম নতুন ঠিকানার পরিকল্পনা করেন। বিজ্ঞান কল্পকাহিনির লেখকেরা তো অনেক আগে থেকেই এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছেন।
অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, যেসব বিপদের কথা আন্দাজ করা হয়েছিল, সেগুলোর কোনোটাই উপনিবেশ স্থাপনের ক্ষেত্রে মূল সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়নি। এই যেমন অবকাঠামো স্থাপনের খরচ, পৃথিবীর মতো পরিবেশ তৈরি করা, শক্তির আধার স্থাপন, মহাজাগতিক রশ্মি থেকে নিরাপত্তা—সব সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। কাজগুলো সহজ ছিল না, কিন্তু সম্ভব হয়েছে ঠিকই।
সূর্যই আমাদের শক্তির মূল উৎস। এমনকি বাড়তি শক্তি আমরা পৃথিবীতে রপ্তানিও করি। খুব সহজেই উৎপাদন করতে পারি ফসল। উদ্বৃত্তটুকু পাঠিয়ে দিই পৃথিবীতে। মাংসের চাহিদা পূরণের জন্য আমাদের এখানে আছে খরগোশ ও মুরগির মতো ছোট ছোট প্রাণী। প্রয়োজনীয় ধাতু জোগাড় করি মহাকাশ থেকে। কেবল চাঁদই নয়, ছোটখাটো উল্কাপিণ্ড ও ধূমকেতু থেকেও বিশেষ কৌশলে সংগ্রহ করা হয় এসব। আমরা যদি গ্রহাণু পর্যন্ত পৌঁছাতে পারি, তাহলে প্রয়োজনীয় সবকিছুর আর কোনো অভাব থাকবে না।
কিন্তু আমাদের মূল যে সমস্যা, তা খুব কম লোকই আন্দাজ করতে পেরেছিল। মূলত টিকে থাকার মতো বাস্তুতন্ত্র বজায় রাখতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। প্রতিটি উপনিবেশই স্বতন্ত্র। এখানে রয়েছে মানুষ, গাছ, পশুপাখি। এ ছাড়া বাতাস, পানি আর মাটি তো আছেই। প্রাণ আছে, এমন সবকিছুর সংখ্যা কিন্তু প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পায়। সেই সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা হয় অবশ্য।
সৌভাগ্যবশত এমনটা ঘটার আশঙ্কা নিতান্ত কম। এ রকম কিছু ঘটার আগেই আমরা গ্রহাণুগুলো খুঁজে বের করে গতিপথ পরিবর্তন বা ধ্বংস করে ফেলার প্রযুক্তি আয়ত্তে নিয়ে আসতে পারব। তবু এই বিপদগুলো অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।
উদ্ভিদ এবং অন্যান্য প্রাণী? হ্যাঁ, তাদের নিয়ন্ত্রণ করি আমরা। তদারকির মাধ্যমে জন্মের হার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখার চেষ্টা করি। কিন্তু মানুষের বেলায় সেটা বড্ড কঠিন। উপরন্তু মানুষের জন্মের হারকে কখনোই মৃত্যুহারকে ছাড়িয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। এখানে উল্লেখ্য, জীবনকে যতটা দীর্ঘায়িত করা যায়, সে চেষ্টাও আমাদের প্রবল। আর সে কারণেই আমাদের সভ্যতা পৃথিবীর তুলনায় তারুণ্যহীন। যুবক-যুবতী বা কিশোর-কিশোরীদের সংখ্যা হাতে গোনা। বেশির ভাগই বয়স্ক বা প্রায় বয়স্ক মানুষ। এ কারণে একটা মানসিক চাপের সৃষ্টি হয় ঠিকই, কিন্তু উপনিবেশবাসীর অনেকের ধারণা, এই চাপটুকু একদিক দিয়ে ভালো। এ রকম নিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যার কারণেই এখানে কোনো গৃহহীন, দরিদ্র বা অসহায় মানুষের দেখা পাওয়া যাবে না।
আবার পানি, বাতাস ও খাদ্যদ্রব্য খুব সাবধানতার সঙ্গে পুনর্ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হয়। আমাদের প্রযুক্তির বেশির ভাগই নিয়োজিত ব্যবহৃত পানি পুনঃশোধন এবং শরীরনিঃসৃত বর্জ্য পদার্থ থেকে সার তৈরি করার কাজে। রিসাইকেল প্রযুক্তি কোনো কারণে বাধাগ্রস্ত হলে আমরা বিরাট সমস্যায় পড়ে যাব। এমনটা কিছুতেই হতে দেওয়া যাবে না। আর হ্যাঁ, সবকিছু ঠিকঠাক চললেও আমরা রিসাইকেল করা সবকিছু খাই বা পান করি, এই ধারণা স্বস্তিকর নয় মোটেও। পৃথিবীতেও কিন্তু রিসাইকেল হয়, কিন্তু বিশালতার কারণে সেই প্রাকৃতিক রিসাইকেল মানুষের অলক্ষেই রয়ে যায়।
এ ছাড়া কোনো বড়সড় উল্কা বা গ্রহাণু যেকোনো মুহূর্তে উপনিবেশের বাইরের প্রতিরক্ষা খোলসে আঘাত করে বিপুল ক্ষতি করতে পারে। ছোট একটা নুড়ির মতো বস্তুই বড়সড় ক্ষতির জন্য যথেষ্ট। আর এক ফুটের চেয়ে বড় হলে তো পুরো উপনিবেশই ধ্বংস হয়ে যাবে। সৌভাগ্যবশত এমনটা ঘটার আশঙ্কা নিতান্ত কম। এ রকম কিছু ঘটার আগেই আমরা গ্রহাণুগুলো খুঁজে বের করে গতিপথ পরিবর্তন বা ধ্বংস করে ফেলার প্রযুক্তি আয়ত্তে নিয়ে আসতে পারব। তবু এই বিপদগুলো অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। একদিক দিয়ে অবশ্য লাভই হয়েছে। এসব হুমকির কারণে আমাদের বাড়াবাড়ি রকমের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে কারও কারও যে অভিযোগ, সেটা কিছুটা হলেও প্রশমিত হয়।
এত সব বিষয় বিবেচনা করেও মনোযোগ আর অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে চাইলে আমরা নিজেদের বাস্তুতন্ত্র ঠিকঠাক বজায় রাখতে পারতাম, যদি বহির্বাণিজ্য এবং ভ্রমণের ব্যাপারটা না থাকত।
প্রতিটি উপনিবেশই এমন কিছু জিনিস তৈরি করে, যা অন্যান্য উপনিবেশের কাছে মহার্ঘ্য। সেটা খাবার হতে পারে, শিল্প হতে পারে আবার বিশেষ যন্ত্রপাতিও হতে পারে। তা ছাড়া পৃথিবীর সঙ্গেও আমাদের বাণিজ্য করতে হয়। উপনিবেশবাসীর অনেকে আবার পৃথিবীতে গিয়ে দর্শনীয় জায়গাগুলো থেকে বেড়িয়ে আসে। আমাদের এখানে যা যা নেই, সেগুলো দেখার উদ্দেশ্যেই মূলত যায় তারা। পৃথিবীর অধিবাসীরা অবশ্য কখনোই বুঝতে পারবে না, বিস্তৃত নীল দিগন্ত, সত্যিকার সমুদ্র বা শুভ্র তুষারে ঢাকা পর্বতমালা—এসব দৃশ্য আমাদের জন্য কতটা মোহনীয়।
তাই পৃথিবী এবং উপনিবেশগুলোর মধ্যে যাতায়াত চলতেই থাকবে। কিন্তু প্রতিটি উপনিবেশের বাস্তুগত ভারসাম্য ভিন্ন ধরনের। পৃথিবীর বাস্তুসংস্থান অবশ্যই আমাদের তুলনায় বিশাল এবং অনেক উন্নত।
স্বাভাবিকভাবেই এ রকম কোনো ঘটনা ঘটলে জোর নিয়ন্ত্রণের দাবি ওঠে। এ কারণে এক উপনিবেশ থেকে আরেক উপনিবেশে গেলে কিংবা পৃথিবী থেকে ফেরার সময় ভালোমতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না।
আমাদের এখানে নানা রকম কীটপতঙ্গ আছে, যারা পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে এবং পুরোপুরি অভ্যস্ত হয়ে গেছে। কিন্তু হঠাৎ যদি অন্য উপনিবেশ কিংবা পৃথিবী থেকে নতুন ধরনের কোনো কীটপতঙ্গ আমাদের এখানে প্রবেশ করে, তাহলে কী হবে?
উটকো একটা পোকা, কীট কিংবা ইঁদুর–জাতীয় প্রাণী আমাদের পুরো বাস্তুব্যবস্থা তছনছ করে দিতে পারে। যার খেসারত দিতে হবে আমাদের গাছপালা ও প্রাণীগুলোকে। অনেকবার এমন ঘটেছে যে উপনিবেশগুলোকে এ রকম হুমকিস্বরূপ নানা রকম জীব খুব সাবধানতার সঙ্গে উপনিবেশ থেকে বের করে দিতে হয়েছে।
এর চেয়ে ভয়ের বিষয়ও আছে। নতুন ধরনের ক্ষতিকর কোনো ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস কিংবা প্রোটোজোয়ার সংক্রমণ হলে কী ঘটবে? এসব রোগবালাইয়ের কারণে পৃথিবীর মানুষদের হয়তো কিছু হবে না, কিন্তু আমরা একদম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাব। সে ক্ষেত্রে পুরো উপনিবেশকে প্রতিষেধক সেরাম আবিষ্কারে পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে হবে। আর রোগ যদি ছড়িয়েই পড়ে, গড়ে তুলতে হবে শক্ত প্রতিরোধ। এসব করেও হতাহতের ঘটনা পুরোপুরি থামানো যায় না।
স্বাভাবিকভাবেই এ রকম কোনো ঘটনা ঘটলে জোর নিয়ন্ত্রণের দাবি ওঠে। এ কারণে এক উপনিবেশ থেকে আরেক উপনিবেশে গেলে কিংবা পৃথিবী থেকে ফেরার সময় ভালোমতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। তাদের ব্যাগ থেকে শুরু করে সবকিছু তন্নতন্ন করে পরীক্ষা করা হয়। তাদের অজান্তেই কোনো জীবাণুর সংক্রমণ হয়েছে কি না, তা জানার জন্য কিছুদিন আলাদা করে রাখাটা ভীষণ জরুরি।
কিন্তু এসব বিপদের কথা মাথায় রেখেও উপনিবেশের অনেক অধিবাসী পৃথিবীতে ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারে গোঁ ধরে বসে থাকে। পৃথিবীতেই সব বিপজ্জনক জীবাণু এবং পরজীবীর আবাস। সব উপনিবেশেই এমন কিছু দল আছে, যারা মনে করে, পৃথিবীর সঙ্গে উপনিবেশগুলোর যোগাযোগ একদম বিচ্ছিন্ন করে ফেলা উচিত। মাঝেমধ্যে নিজেদের দাবি বেশ তৎপরতার সঙ্গেই উত্থাপন করে তারা।
আমি পৃথিবীবাসীকে এ বিপদের ব্যাপারে সতর্ক করে দিতে চাই। পৃথিবীবাসীর প্রতি উপনিবেশের অধিবাসীদের অবিশ্বাস, এমনকি ঘৃণা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
প্রতিটি উপনিবেশই একসময় পৃথিবীকে বিদায় জানাবে এবং মহাশূন্যের অচিন্তনীয় শূন্যতার লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করবে। স্বাধীন জগৎ হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটবে সব কটির। কে জানে, হয়তো লক্ষ বছর পর কোনো একটি উপনিবেশ পৃথিবীর মতো কোনো গ্রহ খুঁজে পাবে।
যত দিন পর্যন্ত পৃথিবী আমাদের দৃষ্টিসীমার মধ্যে থাকবে, দূরত্ব হবে কয়েক শ বা কয়েক হাজার মাইল, তত দিন সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা বলে এলে কোনো লাভ নেই। পৃথিবীর প্রতি উপনিবেশবাসীর মোহ ও আকর্ষণ ভীষণ। আর সে জন্যই ইদানীং কানাঘুষা চলছে এই সৌরজগত ছেড়ে চলে যাওয়ার ব্যাপারে। খুব বেশি দিন কিন্তু এই বিষয়গুলো কেবল কানাঘুষা থাকবে না।
প্রতিটি উপনিবেশে মাইক্রোফিউশন মোটরের মাধ্যমে পরিচালিত প্রযুক্তির সরঞ্জাম আছে। যত দিন আমরা সৌরজগতের মধ্যে আছি, তত দিন সৌরশক্তি দিয়েই যাবতীয় কাজ চলে যাবে। কিন্তু সৌরজগৎ থেকে বাইরে বের হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে একসময় সূর্যের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব এত বেড়ে যাবে যে তখন সৌরশক্তির কোনো ব্যবস্থা থাকবে না। সে ক্ষেত্রে হাইড্রোজেন ফুয়েলের জন্য ছোটখাটো ধূমকেতু ধরে কাজ চালাতে হবে।
প্রতিটি উপনিবেশই একসময় পৃথিবীকে বিদায় জানাবে এবং মহাশূন্যের অচিন্তনীয় শূন্যতার লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করবে। স্বাধীন জগৎ হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটবে সব কটির। কে জানে, হয়তো লক্ষ বছর পর কোনো একটি উপনিবেশ পৃথিবীর মতো কোনো গ্রহ খুঁজে পাবে। হয়তো খালি সে গ্রহে জনবসতি গড়ে উঠতে শুরু করবে আবার।
পৃথিবীকে আমি মূলত এ বিষয়েই সতর্ক করতে চাই। উপনিবেশগুলো একসময় পৃথিবীকে ত্যাগ করবে। নতুন নতুন উপনিবেশ বানালে সেগুলোর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য হবে বলে দিচ্ছি এখনই। একভাবে চিন্তা করলে আপনাদের বংশধরেরাই ছড়িয়ে পড়বে গ্যালাক্সিজুড়ে। তাদের অদৃশ্য হয়ে যেতে দেখলে কথাটা ভেবে নিজেদের সান্ত্বনা দিতে পারেন।