অলোকানন্দার বাবা খুব রাশভারী মানুষ ছিলেন। এই যুগে রাশভারী কথাটা খাটে না, বিশেষত উনি যখন কম্প্যুটার নিয়ে কাজ করতেন, আমার মা–বাবা থেকে অনেক চটপটে ছিলেন, পাহাড়ে হাঁটতেন, ক্যাম্পিং করতেন, ম্যারাথন দৌড়াতেন, তবু তাঁর রাশভারী ভাব যেন কাটল না। তা না হলে কি এই যুগে কেউ অলোকানন্দা নাম রাখে। একবার অলোকাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, উনি কী নিয়ে কাজ করেন। অলোকা ‘কেন্দ্রীণ পদার্থবিদ্যা’—এ রকম একটা কিছু উত্তর দিয়েছিল।
অলোকা আমার স্কুলেই এক ক্লাস ওপরে পড়ত। তুখোড় ছাত্রী, ওদের বাসায় যেতাম এটা–ওটা পড়াশোনা বুঝে নিতে। অলোকার বাবাকে আমি ভয় পেলেও উনি আমাকে কেমন যেন প্রশ্রয় দিতেন। অলোকার মা জীবিত ছিলেন না। ওদের বাড়ি ছিল আমাদের বাড়ির সামনেই, রাস্তাটা পার হলেই। আমাদের বাড়ির সামনে ছিল একটি সিকামোর গাছ, আর ওদের বাড়ির সামনে একটা জারুল। আমাদের রাস্তাটা ব্যস্ত ছিল না সেরকম। বিশাল শহরটির প্রান্তে ছিল আমাদের পাড়াটি। শান্ত। বিকেল আর সকালের রঙে রাঙা, দুপুরের সূর্য মৃদু থেকে মৃদুতর। গ্রীষ্মে জারুলের ল্যাভেন্ডার রঙের ফুল রাস্তাটাকে ঘিরে রাখত। কে আমাকে বলেছিল, আর একটি ভাষায় একে বলে ক্রেপ-মার্টল। ক্রেপ-মার্টল কথাটা আমার খুব পছন্দের ছিল। আর ছিল জাকারন্ডা গাছ। তার ফুলও ছিল বেগুনি। তবে সেই বেগুনি জারুলের মতো নয়। অলোকা একদিন বলল, সে লাল রঙের জারুল দেখেছে। আমি কথাটা বিশ্বাস করিনি, তর্ক করলাম। বলল, শহরের অন্য প্রান্তে, মেট্রোরেল দিয়ে প্রায় ঘণ্টাখানেক লাগবে সেখানে পৌঁছাতে। বললাম ঠিক আছে, আমাকে নিয়ে যেও।
বাড়ি থেকে এতদূর এর আগে যাইনি। আমাদের রেল বড় বাজারের ওপর দিয়ে গেল। নিচে মনে হলো অসংখ্য মানুষ, গাড়ির সারি, বাসের জটলা। ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এই পাড়াটা কেমন করে চিনেছিল সে। আলোকা বলেছিল, সবকিছু জেনে ফেলতে নেই, মানুষের জীবনে রহস্য থাকা উচিত। ভেবেছিলাম, অলোকাদের ক্লাসে মনে হয় এরকম দর্শনের কথা বলা হয়। আমাদের তখনো দর্শন পড়ার সময় হয়নি। শেষ স্টেশনে নেমে আমরা হেঁটে গিয়েছিলাম। একটা নির্জন তেমাথার মোড়ে জারুলটা দাঁড়িয়ে ছিল। তাতে কোনো ফুল ছিল না। আলোকা কেঁদে ফেলেছিল, কিন্তু আমি একটা ফুল খুঁজে পেয়েছিলাম। শেষ একটি ফুল যেন আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। কিন্তু ফুলটা অলোকাকে সান্ত্বনা দিতে পারল না। ফুলের লাল রংটি ফ্যাকাশে হয়ে এসেছিল। আমি সেদিন অলোকার হাত ধরেছিলাম তাকে শান্ত করতে। এটুকুও রাস্তায় যে কটি মানুষ যাচ্ছিল, তাদের সহ্য হচ্ছিল না, তারা তাকাচ্ছিল। অলোকা হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইছিল। আমি আরও জোরে ধরে রাখলাম। বললাম, ‘ওরা আমাদের দেখছে, অলোকা। দেখুক। ওদের চোখে আমরা রহস্যের মানুষ।’ অলোকা হেসে ফেলেছিল। অন্যদিকে জায়গাটার আলো-আঁধারি স্থানীয় মানুষদেরও রহস্যময় করে তুলেছিল। আমরা একটা রেস্তোরাঁয় চা খেতে ঢুকেছিলাম, লাল শাকের চপ ছিল সেখানে।
মা ডাকলেন, ‘অমল, চলে আয়, নাহলে হারিয়ে যাবি।’ অলোকার বাবাও দেখলাম আমাকে ফিরে যেতে বলছেন। দেখলাম ফাটলটা আরও প্রশস্ত হচ্ছে, আমাদের বাড়িটা দূরে সরে যাচ্ছে। অলোকাকে কিছু একটা বলা ছিল, কিন্তু হলো না।
আমাদের বাড়ির দোতলা থেকে জারুলের পাশ দিয়ে দোতলায় অলোকার ঘরটা দেখা যেত। অনেকদিন সেটার জানালা দিয়ে ও গলা বাড়িয়ে আমাকে ডাকত, ‘অমল, অমল!’ হেমন্তে গাছগুলোর পাতায় সে রকম রং আসত না, কিন্তু অনেক পাতাই ঝরে যেত। তখন আমাদের নিচতলার বসার ঘরটা থেকেই অলোকার ঘরটা দেখা যেত। এমনই চলছিল, তারপর শীতের এক গভীর রাতে মাটি কেঁপে উঠল। বহুদূর থেকে ভেসে এল একটা চাপা গুমগুম আওয়াজ। ভূমিকম্প? এই গ্রহে ভূমিকম্প সে রকম হয় না। মা আমার ঘরে ঢুকে বললেন, ‘ভয় পাস না অমল, মনে হয় না এখন আর ভূমিকম্প হবে।’ আমার মা ভূতাত্ত্বিক, তার কথায় ভরসা পেলাম। ঘুমিয়ে পড়লাম।
কিন্তু সকালে উঠে জানালা দিয়ে দেখি সামনে অলোকাদের বাড়িটা নেই, তার বদলে অন্য একটি বাড়ি। স্বপ্ন দেখছি এই ভেবে বাইরে এসে দেখলাম অলোকাদের বাড়ি আমার হাতের ডান দিকে সরে গেছে। আর আমাদের সামনে এসেছে নতুন একটা বাড়ি, ক্যাটক্যাটে হলুদ রঙের। আমার পছন্দ হলো না একেবারেই। সামনের রাস্তার মধ্যে একটা ফাটল, মিটারখানেক প্রশস্ত, লম্বালম্বি চলে গেছে পশ্চিম থেকে পুবে, শেষ কোথায় দেখা যাচ্ছে না।
লাফ দিয়ে ফাটলটা পেরিয়ে ওদের বাড়ির সামনে দৌড়ে গেলাম। ‘অলোকা, অলোকা,’ ওদের বাইরের ঘাসের আঙিনা থেকে ডাকলাম। অলোকা আর ওর বাবা বের হয়ে এসেছিল। আমার মা আমার পেছন পেছন ওদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন, তবে ফাটলটা পার হননি। মা ডাকলেন, ‘অমল, চলে আয়, নাহলে হারিয়ে যাবি।’ অলোকার বাবাও দেখলাম আমাকে ফিরে যেতে বলছেন। দেখলাম ফাটলটা আরও প্রশস্ত হচ্ছে, আমাদের বাড়িটা দূরে সরে যাচ্ছে। অলোকাকে কিছু একটা বলা ছিল, কিন্তু হলো না। লাফিয়ে আবার এদিকে চলে এলাম। ফোনে অলোকাকে ধরতে পারলাম না, ফোনলাইন কাজ করছিল না। সেদিন আর স্কুলে যাওয়া হলো না। স্কুলটা ছিল অলোকাদের বাড়ি পেরিয়ে আরও উত্তরে। সারা দিন ছটফট করলাম, কিন্তু মা স্কুলে যেতে দিলেন না। সারা রাত ভোরের অপেক্ষায় ঘুম হলো না। আকাশ একটু ফরসা হতে না হতেই দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে দেখি গতকালের ক্যাটক্যাটে হলুদ বাড়িটাও কোথায় যেন চলে গেছে। অলোকাদের বাড়িটি আর কোথাও দেখা যাচ্ছে না।
এর মধ্যে ফাটলটা এত বড় হয়ে গিয়েছিল যে লাফ দিয়ে পার হওয়ার মতো অবস্থা ছিল না। ফাটলের নিচ থেকে ধোঁয়া উঠছিল। মা বললেন, পৃথিবীর অভ্যন্তরের সঞ্চিত তাপ বের হচ্ছে। এভাবেই অলোকাকে হারিয়ে ফেললাম। মনে পড়ে, ওই কদিন মা শুধু বলেছিলেন, ‘তারা কীভাবে এটা করল?’
২
সরতে লাগল আমাদের বাড়ি। এরপর বহু বাড়ি এল ফাটলের ওপাড়ে। শার্ত্রোজ, ফিউশা, ফিরোজা, পান্না, নীললোহিত, গৈরিক মাটির রং দিয়ে মাখা ছিল উত্তরের সেই বাড়িগুলোর দেয়াল। বারান্দায় ছিল ফুল—অলকানন্দা কি মৌসন্ধ্যা, ক্লেমেন্টাইন কি পেটুনিয়া। ওদিকের আকাশে মেঘও ছিল অন্য রকম—নীলাভ নীল পুঞ্জমেঘ। ওসব দেখে আমাদের গ্রহটি এখনো পুরোনো হয়নি ভেবেছিলাম আমি, কিন্তু অলোকার স্মৃতি পুরোনো হতে হতে টেকটনিক সঞ্চালনে মাটির গভীরে চলে যেতে থাকল।
ফাটলের দক্ষিণে, আমাদের দিকের প্রতিবেশীরা বদলাল না, তারা মন্ত্রণায় ব্যস্ত রাখল নিজেদের, ফাটলের ওপাশের বাড়ির রংগুলো ওদের পছন্দ হতো না। এতদিনে আমার খেয়াল হলো, আমাদের প্রতিবেশীদের বাড়িগুলোর কোনো রং নেই। সিমেন্ট আর পলেস্তারা যেমন দিয়েছিল স্থপতিরা, সেভাবেই রাখা ছিল তাদের বাড়ি। ‘প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তর,’ গর্ব করে বলে তারা, ‘রং হলো ক্ষণিকের ব্যাপার। একবার দিলে মলিন হবে, তাই আবার দিতে হবে। তার থেকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে রংহীন থাকাই ভালো, রংহীন বাড়ি ত্যাগ ও তিতিক্ষার প্রতীক।’ আমাদের বাড়িতে তেমন ত্যাগ-তিতিক্ষা ছিল না। আবিষ্কার করলাম, আমাদের বাড়িটির দেয়াল এক রুক্ষ ধূসর রং নিয়ে বেঁচে আছে।
কিন্তু একদিন সন্ধ্যায় বাবাও ফিরলেন না। দুশ্চিন্তায় সারা রাত জেগে বসে রইলাম। ভোর হয় হয় এই সময়, কিছুটা বেপরোয়া হয়েই আমাদের সামনের বাড়ির দরজায় গিয়ে কলবেল টিপলাম, তাতে কোনো শব্দ না শুনে ধাক্কা দিলাম দরজায়।
আমাদের সেই ধূসর শহরে জন্ম নিল এক নতুন কর্তৃপক্ষ, ওই শহরের মতোই সেটি ছিল ধূসর। আমার মাকে সেই কর্তৃপক্ষ ডেকে নিয়ে গেল। মা একদল বিজ্ঞানীর সঙ্গে রাতদিন থেকে ফাটলের সমাধান করতে চাইলেন। কিন্তু পৃথিবীর টেকটনিক সঞ্চালনকে কে বাধা দিতে পারবে? প্রথম প্রথম মা বাড়ি আসতেন দু-তিন দিন পরপর, এরপর এক সপ্তাহ এলেন না। বাবা কাজ করতেন একটি ব্যাংকে। মায়ের খোঁজে করতে গেলে তাঁকে বলা হলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিতে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কী কাজ, সেটা আমি কেন, বাবাই বুঝতে পারলেন না। বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, বিজ্ঞানীরা স্বরাষ্ট্রর অধীন কেন? উত্তরটা পাওয়া গেল না। কিন্তু আমি সে সময় অনেক আশাবাদী ছিলাম, খুব শিগগির যে মা আবার ফিরে আসবেন, নিশ্চিত ছিলাম সে সম্বন্ধে।
কিন্তু একদিন সন্ধ্যায় বাবাও ফিরলেন না। দুশ্চিন্তায় সারা রাত জেগে বসে রইলাম। ভোর হয় হয় এই সময়, কিছুটা বেপরোয়া হয়েই আমাদের সামনের বাড়ির দরজায় গিয়ে কলবেল টিপলাম, তাতে কোনো শব্দ না শুনে ধাক্কা দিলাম দরজায়। রাতের পোশাক পরা মাঝবয়সী মানুষটি বিরক্তিসহকারে দরজা খুললেও আমাকে চিনতে পেরে ‘সুপ্রভাত’ বললেন। মা-বাবা কেউই বাড়ি ফেরেনি শুনে বললেন ভেতরে আসতে। সেই বাড়ির ভেতরটা পুরোনো দিনের সোঁদা গন্ধে ভরা ছিল। আমাকে একটা সোফায় বসতে বলে নাম জিজ্ঞেস করলেন। বললেন, ‘অমল, আমাদের পৃথিবীটা কেমন বদলে গেল, তাই না? পুরোনো কিছুই আমরা ফেরত পাব না।’ আমার মা ও বাবা পুরোনোর মধ্যে পড়ে কি না, বুঝতে পারলাম না। বাইরে সূর্য, কিন্তু ইচ্ছা করেই মনে হলো ঘরের ভেতরে আলো আসার সব পথ বন্ধ করা হয়েছে। চুপ করে রইলাম। ভদ্রলোক বললেন, ‘তুমি আমার নাম জানো না। আমার নাম হলো রাকোনতাহ্ মোরি।’
এ রকম নাম কারও হতে পারে বিশ্বাস হলো না। ‘আমার নাম নিয়ে ভেবো না,’ আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন রাকোনতাহ্, ‘নাম নিয়ে বেশি ভাবলে সেটা এক অর্থহীনতায় পরিণত হতে পারে।’ এ রকমভাবে কেউ আমার সঙ্গে আগে কথা বলেনি। কী বলব, ভেবে পেলাম না। উনি বললেন, ‘অনেক কিছুই আমাদের হাতে নেই, অমল। এ রকম ফাটল যে হবে, কয়েক দিন আগেও কি আমরা ভেবেছি? মানুষ প্রকৃতিকে ব্যবহার করতে চেয়েছিল নিজের স্বার্থে। সেটা খারাপ কিছু না, তা না হলে কি আমরা এ রকম জীবন যাপন করতে পারতাম? তোমাকে শক্ত হতে হবে, অমল।’
রাকোনতাহ্ সানের কথা অবোধ্য রইল আমার কাছে। এরপর এক সপ্তাহ ওনার বাড়ি থেকে প্রতিদিন খাবার পৌঁছে দেওয়া হতো আমাকে। তারপর এক মাস যাওয়ার পর একদিন খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গেল, বাইরের দরজায় একজন ধাক্কাচ্ছে। ঘুমচোখে দরজা খুলে দিতেই দুজন উর্দি পরা সেপাই ঘরে ঢুকে পড়ল। একজন মাঝবয়সী, অন্যজন মনে হয় সবে কৈশোর পার হচ্ছে। ‘অমল সান, আপনাকে সেনাবাহিনীতে যুক্ত করা হয়েছে। আমাদের সাথে আপনাকে যেতে হবে। সাথে কিছু নেওয়ার দরকার নেই, সেনাবাহিনী আপনাকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করবে।’
‘বিশ্বাসঘাতকতা’ কথাটা আগে শুনিনি। রাকোনতাহ্ বললেন, ‘ওরা আমাদের না জানিয়ে এই ফাটলের সৃষ্টি করেছে।’ তা কী হতে পারে? এই বিশাল গ্রহের উপরিভাগ ভেঙে ফেলে তাকে সঞ্চালন করা কি মানুষ করতে পারে? আর সেটা সে করবেই–বা কেন?
কথাগুলো মাঝবয়সী পুরুষটা একটু তাড়াহুড়ো করেই বলল, ছাদের দিকে তাকিয়ে, যেন নিজের কথাগুলোর ওপর তার বিশ্বাস নেই। সাথের সেপাইটি আমার থেকে দু-এক বছর বড় হতে পারে। সে দেখছিল ঘরের জিনিসগুলো একটা অস্বস্তি নিয়ে। ব্যাপারটা কী হচ্ছে, সেটা বোঝার মতো ক্ষমতা আমার ছিল না। কয়েক মাস আগেও এখানে সেনাবাহিনী বলে কিছু ছিল না। মাঝবয়সীকে কী উত্তর দেব, ভেবে পেলাম না। বিড়বিড় করে বললাম, ‘আপনারা বসুন, আমি একটু আসছি।’ রাকোনতাহ্ সানকে পেতে হবে, আমার মাথায় শুধু এই চিন্তাই কাজ করছিল। কিন্তু বাইরের দিকে পা ফেলতেই মাঝবয়সী আমার হাত ধরে ফেলল, ‘কোথায় যাচ্ছ, তুমি?’
‘এই বাসায় আর কেউ নেই, আমার মা ও বাবাকে আপনারা নিয়ে গেছেন। আমাকে দেখাশোনা করেন আমাদের প্রতিবেশী রাকোনতাহ্ সান। আপনারা তার সাথে কথা বলুন।’ কৈশোরোত্তীর্ণ তরুণটি অধৈর্য হয়ে গেল আমার এই সামান্য দুটো কথা বলার সময়। সে ডান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে আমার দিকে এগোতেই মাঝবয়সী তাকে হাত তুলে থামাল। সে বলল, ‘ঠিক আছে, সামনে থাকো, আমরা পেছনে আছি।’
রাকোনতাহ্ সান বাড়ি ছিলেন। আমাদের তিনজনকে একসঙ্গে দেখেই মনে হয়, ব্যাপারটা বুঝে ফেললেন। আমাকে আর তরুণকে বাইরের ঘরে বসিয়ে মাঝবয়সীকে ভেতরে নিয়ে গেলেন। আমি ভাবিনি, তাঁর সঙ্গে আলাদা করে কথা বলতে মাঝবয়সী রাজি হবে। কিন্তু রাকোনতাহ্ সানের মধ্যে এমন কিছু ছিল, যা কিনা সবাইকে ইম্প্রেস করত। তরুণটি এবারও ঘরের সব জিনিস লক্ষ করতে শুরু করল। আমি একটু দ্বিধান্বিত হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি কি যুদ্ধে যাচ্ছ?’ সে উত্তর না দিয়ে আরও মনোযোগ দিয়ে ঘরের জিনিসপত্র দেখতে লাগল। জিজ্ঞেস করলাম, ‘যুদ্ধ কার সঙ্গে? উত্তরের সঙ্গে?’ এবার সে কিছুটা তাচ্ছিল্যের সঙ্গে আমার দিকে তাকাল। বললাম, ‘কিন্তু তুমি তো এখনো ছোট।’ এর উত্তরে সে হয়তো অট্টহাসি দিতে চেয়েছিল, কিন্তু তার হাসি আটকে গেল, সে কাশতে শুরু করল।
রাকোনতাহ্ মাঝবয়সীকে নিয়ে ফিরে এলেন। মাঝবয়সীর মুখে একটা বশংবদভাব, সে তরুণকে বলল, ‘চলো।’ তরুণ বিভ্রান্ত হয়ে আমার দিকে হাত তুলে বলল, ‘কিন্তু, স্যার…’ মাঝবয়সী ধমকে উঠল, ‘চলো বলছি।’ তারা বেরিয়ে গেলে রাকোনতাহ্ সান বললেন, ‘যত্তসব, এখন বাচ্চাদের যুদ্ধের জন্য ধরে নিয়ে যাচ্ছে।’ তারপর আমার মুখের বিমূঢ় ভাব দেখে যোগ করলেন, ‘তুমি জানো না, উত্তরের বিরুদ্ধে দক্ষিণ লড়াই শুরু করেছে?’ জিজ্ঞেস করি, ‘কেন?’
‘কেন?’ রাকোনতাহ্ বলেন, ‘এরা মনে করে উত্তর আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।’
‘বিশ্বাসঘাতকতা’ কথাটা আগে শুনিনি। রাকোনতাহ্ বললেন, ‘ওরা আমাদের না জানিয়ে এই ফাটলের সৃষ্টি করেছে।’ তা কী হতে পারে? এই বিশাল গ্রহের উপরিভাগ ভেঙে ফেলে তাকে সঞ্চালন করা কি মানুষ করতে পারে? আর সেটা সে করবেই–বা কেন?
‘তুমি একজন ভূতাত্ত্বিকের ছেলে। তোমার এসব জানার কথা। কিন্তু মনে হয়, তোমার মা তোমাকে নিরাপদে রাখতে চেয়েছিল। তোমাকে উনি অনেক কিছুই বলেননি। তুমি বোধ হয় জানো না, বিজ্ঞানীমহলে উনি কত প্রতিষ্ঠিত।’ না, মা আমাকে কিছুই বলেনি, কিন্তু রাকোনতাহ্ সানই-বা তার সম্বন্ধে এত কিছু জানেন কেমন করে? মা কি এতই বিখ্যাত ছিলেন?
‘মা-বাবার কোনো খবর আর জানলেন?’
মুহূর্তের জন্য মনে হলো রাকোনতাহ্র কপালের চামড়া কুঁচকে উঠল, বললেন, ‘ভেবো না, আমার কাছে খবর এসেছে, তোমার মা এই ফাটলের ওপরই কাজ করছেন। কাজটা জটিল, তাই সরকার তাকে ছাড়ছে না।’
আমি এটা শুনেছিলাম কোথাও, আমাদের পাঠ্যপুস্তকে এটা ছিল না। পাঠ্যপুস্তকে কেন ছিল না ভাবি, সামনে আবার এ রকম ম্যাগমা–প্লাবন হতে পারে। এতে যেন আমরা ভয় না পাই, সে জন্য? কিন্তু মা কী করে এই সঞ্চালন বন্ধ করবেন?
এই কয়েক সপ্তাহে রাকোনতাহ্ সানের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। কয়েক দিন আগেও তাঁর কাছে মা–বাবার কোনো খবর ছিল না। তবু তাঁর কথায় ভরসা পেলাম। কিন্তু এর পরদিনই আরেক দল উর্দি পরা সান্ত্রী হাজির হলো সকালে, তাদের মধ্যে সেই অল্পবয়সী সেনাও ছিল। তারা বলল, ‘ফাটলের পাড়েই তোমাদের বাসা। এটাকে আমরা পর্যবেক্ষণকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করব।’ কিসের পর্যবেক্ষণ জানতে চাইলে তারা বলল, ‘উত্তর খুব শিগগির আক্রমণ করবে। আমাদের এ জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’ কথাটা বিশ্বাস হলো না, কিন্তু একগাদা উটকো লোক এভাবে বাড়িতে এসে থাকবে, সেটা কিছুতেই মানতে পারছিলাম না। এই ক্ষেত্রে রাকোনতাহ্ সানও আমাকে সাহায্য করতে পারলেন না। এরপর রাকোনতাহ্ সানের বাড়ি থেকে আমার খাবার আসা বন্ধ হয়ে গেল। ওই সৈন্যরা তাদের রেশনের ভাগ আমাকে দিত। দেখলাম, তারা মানুষ হিসেবে খারাপ নয়। যুদ্ধ সম্পর্কে তাদেরও সে রকম ধারণা নেই। উত্তর এই গ্রহে এক বিরাট ফাটল সৃষ্টি করেছে এবং সেটা দক্ষিণের লোকদের থেকে আলাদা থাকার জন্য, এই ছিল তাদের ধারণা। তাদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘ভাগ যদি করবেই তো আমাদের আক্রমণ করবে কেন?’
তাদের কাছে এর উত্তর ছিল না, কিন্তু রাত্রিবেলা তারা উত্তর দিকে গুলি ছোড়া আরম্ভ করল। গুলিটা যে বিশেষ কোনো লক্ষ্যের দিকে, এমন নয়। তবে উত্তর থেকে কিন্তু কোনো পাল্টা গুলি আসত না।
উত্তরের রঙিন বাড়িগুলো বহু আগেই চলে গেছে। এরপর এল কিছু পাহাড়, তারপর মরুভূমি, তারপর আবার পাহাড়। দূরে দেখলাম কিছু হ্রদ, বছর ঘুরে গেল, ভাবলাম আবার অলোকানন্দার আসার সময় হয়েছে। তারপর একরাতে বাবা ফিরে এলেন, তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দিলেন রাকোনতাহ্ সান। দেখলাম রাকোনতাহ্র পরনে উর্দি। বাবা বললেন, ‘রাকোনতাহ্কে জেনারেল বানানো হয়েছে।’ বললেন, ‘রাকোনতাহ্ একজন ছিঁচকে ফেউ হয়েছে, মানুষের ওপর নজরদারি করে, তাই জেনারেল হয়েছে। তবে সে আমাদের একটা উপকার করেছে, মায়ের জীবনটা বাঁচিয়েছে। মাকে দিয়ে চেষ্টা করানো হচ্ছে এই টেকটনিক সঞ্চালনটা যাতে বন্ধ করা যায়।’
‘মা কি পারবেন?’ উদ্বেগের সঙ্গে জিজ্ঞাসা করি আমি। ‘আমাদের এই দক্ষিণে কেউ যদি পারে, সেটা তোর মা, কিন্তু ও এটা করবে না।’
‘করবেন না মানে?’ আমার বিস্ময় বাঁধ মানে না, কিন্তু তার থেকেও বড় বিস্ময় ছিল এই সংবাদ যে মা জানেন কী করে এই সঞ্চালন বন্ধ করা যায়।
‘শোনো অমল,’ বাবা বলেন, ‘আমাদের গ্রহের কোনো টেকটনিক পাত ছিল না। এই গ্রহের ভেতর অনেক তাপ জমে আছে। কিছু তাপ জমেছে সেই কবে, যখন এই গ্রহ তৈরি হচ্ছিল, আর কিছু তাপ ক্রমাগতই সৃষ্টি হয় তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে। কিন্তু সেই তাপের কোথাও যাওয়ার নেই। কারণ, আমাদের গ্রহের উপরিভাগ নিরেট, তাতে কোনো ফাটল নেই, সে নড়েচড়ে না। তাই কয়েক লাখ বছর পরপর সেই তাপ থেকে সৃষ্ট উত্তপ্ত গলিত ম্যাগমা মাটির ভেতর থেকে বের হয়ে এই গ্রহের একটা বিরাট অংশকে ঢেকে ফেলে। এভাবে সে ভেতরের তাপটা বের করে দেয়। সেই ম্যাগমা ঠান্ডা হয়ে এই গ্রহের উপরিভাগ সৃষ্টি করে। এ রকম শেষ ম্যাগমা-প্লাবন হয়েছিল ৫০ লাখ বছর আগে। তারপর আমরা এসেছি।’
আমি এটা শুনেছিলাম কোথাও, আমাদের পাঠ্যপুস্তকে এটা ছিল না। পাঠ্যপুস্তকে কেন ছিল না ভাবি, সামনে আবার এ রকম ম্যাগমা–প্লাবন হতে পারে। এতে যেন আমরা ভয় না পাই, সে জন্য? কিন্তু মা কী করে এই সঞ্চালন বন্ধ করবেন? আর কেনইবা তিনি সেটা করবেন না? বাবা কথাগুলো বলছিলেন ফিসফিস করে যাতে আমাদের বাড়িতে বাসরত যোদ্ধারা কিছু শুনতে না পায়। বাবা বললেন, ‘এই গ্রহের উপরিভাগকে যদি কয়েকটা টুকরায় ভেঙে ফেলা যায়, তবে অনেক তাপ সেই টুকরাগুলো সঞ্চালন করতে খরচ হয়ে যাবে। ফলে আর ম্যাগমা-প্লাবন হবে না। তোর মা এটা আমাকে বলত, এটা যদি করা যায়, তবে এই গ্রহ সে রকম গরম দুধের মতো উথলে উঠবে না, কিন্তু ও জানত না কীভাবে ওই টেকটনিক পাতগুলো সৃষ্টি করা যায়।’
‘ডকটর ত.! আমরা দক্ষিণের সরকার আপনাকে এই গ্রহের টেকটনিক সঞ্চালন এখনই বন্ধ করতে আদেশ করছি,’ রাকোনতাহ্র গলা গুরুগম্ভীর।
গরম দুধের মতো উথলে ওঠা—অমল চিন্তা করে দৃশ্যটি, পুরো গ্রহ কি এ রকম হতে পারে? উত্তরের বিজ্ঞানীরা কি আমাদের এই ভয়ানক ভবিষ্যৎ বন্ধ করতে পেরেছে?
৩
কয়েক মাস গড়িয়ে গেল, মা ফিরল না এর মধ্যে। তারপর এক গ্রীষ্মের দিনে সিকামোর গাছটির সামনে ফিরে এল সেই জারুলগাছ। ল্যাভেন্ডার রঙের ফুল ফুটেছিল তাতে। আমাদের জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছিল অলোকাদের বাড়িটা। আমাদের বাড়িতে বাস করা যোদ্ধারা সেদিন এদিনের অপেক্ষা করছিল, উর্দি পরা সেপাইরা এক কাতারে ফাটলে নেমে গেল। তারপর উত্তরের চড়াইয়ে উঠতে শুরু করল, আর তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিল জেনারেল রাকোনতাহ্। আমি তাদের পিছু নিলাম। উত্তরের কোনো সৈন্য ছিল না, সেখানকার কিছু নাগরিক দক্ষিণের সৈন্য দেখতে জড়ো হয়েছিল। দক্ষিণের সৈন্যরা আর কোথাও গেল না, গেল অলোকানন্দার বাড়িতে। কেন জানি ভেবেছিলাম এমনটাই হবে। বাইরের দরজাটা অলোকাই খুলে দিয়েছিল। কত দিন পর ওকে দেখলাম, আমাকে সেপাইদের পেছনে দেখে আশ্চর্যই হলো। আমি ওকে ইঙ্গিত করলাম যাতে আমাকে না ডাকে। দক্ষিণের সৈন্যরা উঠে গেল দোতলায়, সেখানে বসেছিলেন অলোকার বাবা।
‘ডকটর ত.! আমরা দক্ষিণের সরকার আপনাকে এই গ্রহের টেকটনিক সঞ্চালন এখনই বন্ধ করতে আদেশ করছি,’ রাকোনতাহ্র গলা গুরুগম্ভীর।
এবার আমার আশ্চর্য হওয়ার পালা। এ–ও কি সম্ভব? উনি এটা করেছেন? সেনাদের কথায় আলোকার বাবা মৃদু হাসলেন, বললেন, ‘আপনাদের মনে হয় কোনো ধারণাই নেই, এই সঞ্চালন কেন সৃষ্টি করা হয়েছে। এ সঞ্চালন তো আপনাদের বাঁচানোর জন্যই। এই গ্রহ আর গরম দুধের মতো উথলে উঠবে না।’
রাকোনতাহ্ এক সেপাইকে ইঙ্গিত করলে সেপাই তার অস্ত্র তাক করে ডকটর ত.র দিকে। রাকোনতাহ্ বলে, ‘সেসব আমি বুঝি না। যেটা আমি বুঝি, সেটা হলো আপনি দক্ষিণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে চেয়েছেন।’
ডকটর ত. তার দিকে তাক করা অস্ত্রটিকে অগ্রাহ্য করে জানালার কাছে যান। জানালা দিয়ে তাকিয়ে বলেন, ‘উত্তর-দক্ষিণ তো কোনো ব্যাপার নয়, এই গ্রহের যে নতুন টেকটনিক পাত সৃষ্টি হয়েছে, তা উত্তর-দক্ষিণ উভয়কেই বাঁচাবে। আর এটি করতে গিয়ে আমাদের প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে। আমরা একটি কেন্দ্রীণ-সংযোজক বোমা ব্যবহার করে উত্তরের একটি জায়গায় নিচের ম্যাগমাকে ওপরে নিয়ে আসতে সক্ষম হই। সেই জায়গায় একটি ফাটল সৃষ্টি হয়, ক্রমে ক্রমে তা সারা গ্রহে ছড়িয়ে পড়ে। আপনাদের উচিত আমাদের ধন্যবাদ দেওয়া।’
‘যেভাবে শুরু করেছেন, সেভাবেই বন্ধ করবেন, আপনি কারও অনুমতি নিয়ে এই কাজ করেছেন?’
‘হা হা, বুঝতেই পারছেন এত বড় একটা কাজ আমার একার পক্ষে করা সম্ভব ছিল না। আমরা জানতাম, এই গ্রহের কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই রাজি হতো না এটা করতে। কিন্তু উত্তরের কিছু মানুষকে আমরা এই কাজের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে সক্ষম হই। এরপর আমাদের ১০টি বছর লেগেছে ওই কেন্দ্রীণ-সংযোজক বোমাটা তৈরি করতে। সেই বোমার ফলাফল একমুখী, তাকে ফেরানো যায় না।’
রাকোনতাহ্ কী বলবে, ভেবে পায় না, তার সমস্ত হুমকি এখানে অচল। ডকটর ত. হাসেন, বলেন, ‘আর আপনারা বোধ হয় খেয়াল করেননি, সব দক্ষিণ এক নয়। বহু দক্ষিণের বাড়িতে এখন রং করা হচ্ছে, দেখুন না।’
তাকে যে এত দিন আটকে রেখেছেন, সেই খবর ফাটল পেরিয়ে অনেক আগেই এদিকে পৌঁছেছে।’ রাকোনতাহ্ চুপ করে থাকে, এই মানুষকে একসময় আমি কী পরিমাণ বিশ্বাস করেছিলাম!
সৈন্যরা ভিড় করে জানালার কাছে। এর মধ্যে সঞ্চালন কিছুটা দ্রুত হয়েছে, সেটা আমাদের নিয়ে এসেছে এক নতুন দক্ষিণপাড়ার সামনে, যে দক্ষিণকে আমরা চিনি না। এই দক্ষিণ রঙে ভরপুর—শার্ত্রোজ, ফিউশা, ফিরোজা, পান্না, নীললোহিত, গৈরিক মাটির রঙে উদ্ভাসিত ছিল তাদের দেয়াল। তাদের বারান্দায় দুলছিল ফুল—অলকানন্দা, মৌসন্ধ্যা, ক্লেমেন্টাইন আর পেটুনিয়া। দক্ষিণের সৈন্যরা অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে, আর সেই সবে কৈশোরোত্তীর্ণ সেনা ছেলেটি বলে, ‘আহা!’
ডকটর ত. বলেন, ‘আশা করি, আপনারা অমলের মাকে ছেড়ে দেবেন। হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমাদের কাছে সব খবরই আসে। তাকে যে এত দিন আটকে রেখেছেন, সেই খবর ফাটল পেরিয়ে অনেক আগেই এদিকে পৌঁছেছে।’ রাকোনতাহ্ চুপ করে থাকে, এই মানুষকে একসময় আমি কী পরিমাণ বিশ্বাস করেছিলাম! অলোকা এসে আমার হাত ধরে, বলে, ‘অমল, দেখো দেখো—লাল জারুল।’ দেখলাম অজানা দক্ষিণের পাড়াটি একটি নয়, সারি দেওয়া জারুলগাছে ভর্তি। এসব গাছের ডালপালায় যেন আগুন লেগেছে, লাল ফুলের আলোয়। ভাবলাম, আমাদের গ্রহের প্রাণী আর উদ্ভিদেরা হয়তো এবার বেঁচে থাকবে আরও বহুকাল। আমার ভাবনায় সাড়া দিয়ে দিগন্তে বিদায় নিল আমাদের সূর্য। সেই দিগন্তে ভেসে রইল কাস্তের মতো বাঁকা প্রথম চাঁদটি। আর উল্টো দিকের দিগন্তে দেখা দিল ভরা পূর্ণিমার দ্বিতীয় চাঁদ।
