ইন্টারোগেশন
মিস তানিয়া, কেমন আছেন আপনি?
আপনাদের সামনে বসে আছি। কেমন আর থাকব!
একটু অস্বস্তি নিয়ে নড়েচড়ে বসলেন এজেন্ট দুজন। ছোট্ট একটা বর্গাকার কক্ষ। ১০ ফুট বাই ১০ ফুটের মতো। রুমের ঠিক মাঝখানে একটা ছোট্ট টেবিল। এক পাশে দুটো চেয়ার, অন্য পাশে একটি। ওই চেয়ারটিতে বসে আছেন তানিয়া শিরিন। বয়সানুসারে তাঁকে তরুণী বলা চলে। ৩০ পেরিয়েছেন। মায়াবী চেহারা। মাথার চুল খানিকটা অবিন্যস্ত। চোখে চিকন ফ্রেমের চশমা। পরনে সাদা শার্ট আর নীল জিনস। একদম মানিয়েছে তাঁকে। মনে হচ্ছে, ঠিক এই সাজ না হলে যেন মানাত না। বরং ছবিতে যেমন দেখায়, বাস্তবে মনে হয় তাঁর বয়স অনেকটা কম।
মায়াবী চেহারা দেখে বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। সেটা স্পষ্ট চোখের ক্ষুরধার দৃষ্টিতে। এই তরুণী একা হাতে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী কোয়ান্টাম কম্পিউটারনির্ভর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ধসিয়ে দিয়েছেন। টুইন টাওয়ারের পর এত বড় হামলা আর কখনো হয়নি আমেরিকার মাটিতে। সে জন্যই আজ তিনি এই ইন্টারোগেশন রুমে।
দুই এজেন্টের একজন মাঝবয়সী। কালো স্যুট পরে আছেন। স্পষ্ট বোঝা যায়, সরকারি কোনো সংস্থায় চাকরি করেন। একেবারে ক্ল্যাসিক গেটআপ—সিনেমায় যেমন দেখা যায়। তাঁর নাম রওশন ইসলাম। অন্যজনের পরনে টি-শার্ট আর কার্গো প্যান্ট। বয়সে তরুণ। অথচ পুরো ডিপার্টমেন্ট তাঁকে যমের মতো ভয় পায়। মাকসুদুর রহমান নামের এই তরুণ কিন্তু সব সময় হাসেন। মুখে স্মিত হাসি, কিন্তু আরও বেশি হাসে তাঁর দুই চোখ। বস তাঁকে ডাকেন ‘ম্যাক্স’ বলে। মানুষটিকে সবাই ভয় পান তাঁর রেকর্ডের জন্য। এমন সব কেস হ্যান্ডেল করেছেন অল্প কয় দিনে, তাঁকে ভয় না পাওয়াটাই অস্বাভাবিক।
কিন্তু মিস তানিয়ার সামনে বসে ম্যাক্সও কেমন যেন হকচকিয়ে গেছেন। একবার গলা খাঁকারি দিলেন। বললেন, আপনার কি অসুবিধা হচ্ছে?
আধঘণ্টা ধরে বসিয়ে রেখে এখন এ কথা জিজ্ঞাসা করছেন? গলার স্বর একদম মসৃণ, একটুও ওঠানামা করেনি।
আধঘণ্টা তো বসিয়ে রাখা হয়নি আপনাকে। আমাদের কিছু টেস্ট করা দরকার ছিল। আপনি ঠিকঠাক আছেন কি না, সেটা দেখার জন্য। আপনার শরীরে সোডিয়াম ক্লোরাইডের পরিমাণ অনেক বেশি। আপনি কি অনেক লবণ খান? এত পরিমাণ সোডিয়াম ক্লোরাইড শরীরে নিয়ে কারও তো সুস্থ থাকার কথা নয়।
মিস তানিয়া হাসলেন। এ বিষয়ে কিছু বললেন না। বরং পাল্টা প্রশ্ন করলেন, কী জানতে চান, বলুন।
সবটাই জানতে চাই। কেন আপনি আর্টকে ধ্বংসের পরিকল্পনা করলেন?
আমি একটা ছোট্ট ল্যাবে কাজ করি। কিন্তু আমি ঠিকই দেখেছিলাম থিমপার্কের সেই ভিডিওটা। আপনারা দেখেননি, এ কথা আসলে বিশ্বাসযোগ্য নয়।
আর্ট মানে আর্টিফিশিয়াল রিয়েল-টাইম টেকনোলজি, সংক্ষেপে আর্ট। পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী কোয়ান্টাম কম্পিউটারনির্ভর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। স্লিংশট নামে যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রতিষ্ঠান এর নির্মাতা। দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল এই এআই। শুরুটা করেছিল চ্যাটবট হিসেবে। একসময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ থেকে শুরু করে দৈনন্দিন নানা কাজে, এমনকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর থিমপার্কেও ব্যবহার শুরু হয় এর। মানবসভ্যতাকে বদলে দিয়েছিল আর্ট। বিপ্লবের ঢেউ উঠেছিল প্রযুক্তিবিশ্বে।
একটু হাসলেন মিস তানিয়া। কারণ, আর্ট ধীরে ধীরে দখল করে নিতে শুরু করেছিল সবকিছু।
কই, আমরা তো সে রকম কোনো সমস্যা দেখিনি।
আমি একটা ছোট্ট ল্যাবে কাজ করি। কিন্তু আমি ঠিকই দেখেছিলাম থিমপার্কের সেই ভিডিওটা। আপনারা দেখেননি, এ কথা আসলে বিশ্বাসযোগ্য নয়।
থিমপার্কের কোন ভিডিও?
ঢাকার গাজীপুরে যে থিমপার্কটা, আর্টওয়ার্ল্ড—সেটার একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল, দেখেননি আপনারা?
একটা রাইড খুলে পড়ছিল এক ছেলের মাথায়। একটা রোবট ছুটে এসে তাকে রক্ষা করে।
হ্যাঁ, ওটাই।
ওতে আর্ট ঝামেলাটা কী করেছে? সে তো একটা মানুষকে বাঁচিয়েছিল।
ভিডিওটা যদি আপনার ফোনে থাকে, সেটা চালান। কিংবা আমার ফোনটি দিন, ওটায় আছে। আমি দেখাচ্ছি।
ম্যাক্স কিছুক্ষণ চুপ করে কী যেন ভাবলেন। মাঝবয়সী মানুষটির চোখে বিভ্রান্ত দৃষ্টি। বুঝতে পারছেন না, ফোন বের করে ভিডিওটা খুঁজে দেখবেন কি না। কিংবা মিস তানিয়ার ফোনটা নিয়ে আসবেন কি না। এ সময় ম্যাক্স তাঁর ফোনটি বের করলেন। সার্চ করে বের করলেন ভিডিওটি। রোবট যে মানুষের বন্ধু, শত্রু নয়—সে জন্য বিখ্যাত হয়েছিল এই ভিডিও। ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল।
ম্যাক্স সেটা বের করে মিস তানিয়ার হাতে দিলেন। ৩ মিনিট ১২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও। মূলত একটি নারী রোবট গিটার বাজাচ্ছিল। সেটাই ভিডিও করছিলেন কেউ একজন। পরে দেখা যায়, একটা রাইড ভেঙে পড়ছে ওপর থেকে। আর নারী রোবটটি গিটার ফেলে দিয়ে ঝাঁপ দিয়েছে। একটা ছেলে দাঁড়িয়েছিলেন রাইডের নিচ বরাবর, নারী রোবটটির কিছুটা সামনে। তাঁকে বাঁচায় রোবটটি।
মিস তানিয়া ভিডিওটি চালালেন। দুই এজেন্টকে বললেন, মনোযোগ দিয়ে দেখুন।
তাঁরা দেখলেন। নারী রোবটটি গান গাইছে। মাঝেমধ্যে মাথার চুল ঠিক করছে। হিউম্যানয়েড রোবট, দেখে মনেই হয় না মানুষ নয়।
মিস তানিয়া জিজ্ঞাসা করলেন, কী দেখছেন?
গান গাইছে একটা রোবট। মাঝেমধ্যে মাথার চুল ঠিক করছে।
না, চুল ঠিক করছে না। বলে, দুই আঙুলে জুম করলেন তিনি ভিডিওটি। ফোরকে ভিডিও, ফাটল না। প্রথমবারের মতো জিনিসটাকে দেখলেন দুই এজেন্ট। একটা মাছি। মেয়েটির চুলে উড়ে উড়ে বসছে বারবার।
রওশন বিড়বিড় করে বললেন, মাছি…একটা মাছি।
ঠিক তা-ই।
রওশন নামের মাঝবয়সী এজেন্ট ঢোঁক গিললেন। ম্যাক্সের মুখভঙ্গিতে কোনো পরিবর্তন দেখা গেল না। স্বাভাবিক গলায় বললেন, না।
ততক্ষণে ম্যাক্স বুঝে ফেলেছেন, কী হতে যাচ্ছে। মাছিটা বারবার উড়ে উড়ে বসছে। হাত দিয়ে সেটাকে সরিয়ে দিচ্ছে রোবটটি। কয়েকবার এমন হলো। এরপর ঠিক যখন রাইডটি পড়বে, তার আগমুহূর্তে নিজের গিটারটি ফেলে দিল রোবটটি। চাপড় মারল মাথায়। মাছিদের নাকি লাখখানেক চোখ থাকে। কিন্তু রোবটের হাত এড়াতে পারল না। নিখুঁত প্রিসিশন। একদম লক্ষ্যে আঘাত হানল।
মিস তানিয়া ভিডিওটা পজ করলেন। এরপর বললেন, এই ভিডিওটা দেখে আমি প্রথম বুঝতে পারি, রোবোটিকসের প্রথম সূত্রটি ভেঙে ফেলেছে আর্ট। মানুষ বা যেকোনো প্রাণের ক্ষতি করা রোবটদের জন্য নিষেধ। কিন্তু একটা মাছিকে হত্যা করেছে এই রোবট। বলা ভালো, এর ভেতরের আর্ট এআই।
সে জন্য আপনি তাকে ধ্বংসই করে দেবেন?
আর কোনো উপায় ছিল না।
আপনি স্লিংশটের মূল অফিসে ঢুকলেন কীভাবে? আর্টকে ধ্বংস করলেন কেমন করে?
কেন, এ রহস্য এখনো আপনারা ভেদ করতে পারেননি?
রওশন নামের মাঝবয়সী এজেন্ট ঢোঁক গিললেন। ম্যাক্সের মুখভঙ্গিতে কোনো পরিবর্তন দেখা গেল না। স্বাভাবিক গলায় বললেন, না। আমরা তো আপনার মতো জিনিয়াস না, মিস তানিয়া।
আপনারা জানলেন কীভাবে, আমিই ধ্বংস করেছি?
আপনার জেনেটিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাওয়া গেছে ঘটনাস্থলে। প্রতিদিন মানুষের ৫০ থেকে ১০০টির মতো চুল ঝরে পড়ে। মানুষ যখন কোথাও যায়, একটু খুঁজলেই তার চুল পাওয়া যায়। আর্টের সেন্ট্রাল চেম্বারে আপনার চুল পাওয়া গেছে। চুলের গোড়া থেকে সংগৃহীত ডিএনএটি আপনার।
আপনি বেশ বুদ্ধিমান। অথচ আর্ট আপনার চোখ ফাঁকি দিল কীভাবে, সেটাই ভাবছি আমি।
আপনিই বলুন।
আর্ট ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছিল পুরো পৃথিবীতে। যে মুহূর্তে এটি রোবোটিকসের প্রথম সূত্রটি ভেঙে ফেলল, সেই মুহূর্তে মানুষের ক্ষতি করায় এটির আর কোনো বাধা রইল না। আমি তখন স্লিংশটের সার্ভার হ্যাক করার চেষ্টা করি। আমার স্পেশালিটি মূলত প্রবলেম সলভিংয়ে। কিন্তু কোনো রকম অ্যালগরিদম ব্যবহার করেই আমি ওদের সার্ভারে ঢুকতে পারিনি।
আমাদের ডিএনএর কোড চার অক্ষরের। কম্পিউটারের কোড হলো ০ আর ১। এই রূপান্তর এমনিতেও খুব জটিল কিছু না। এম-আরএনটাকে এ অনুসারে একটু বদলে দিয়ে ওতে ন্যানো রিডার ও রিলে যুক্ত করে দিলাম।
তখন আমি বাধ্য হয়ে নতুনভাবে ভাবি পুরো সমস্যা নিয়ে। ঠিক করি, আমার ল্যাবে যে কোয়ান্টাম কম্পিউটারটা চালাই, ওটাকে পোর্টেবল করে নিতে হবে। সরাসরি স্লিংশটের মেইন অফিসে গিয়ে সেন্ট্রাল চেম্বারে ঢুকতে হবে। সেখানে গিয়েই একমাত্র এই কৃত্রিম দানবকে ধ্বংস করা সম্ভব।
কিন্তু পোর্টেবল কোনো কম্পিউটার ব্যবহার করতে হলে সার্ভার তো লাগবে। কোয়ান্টাম কম্পিউটারের জন্য যে রকম সার্ভার লাগে, গুগল, অ্যামাজন আর স্লিংশট ছাড়া আর কারও এ রকম শক্তিশালী সার্ভার নেই। তা ছাড়া কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে নিয়মিত শীতলও করতে হয়। এ জন্য যে ধরনের শীতক প্রয়োজন, সেটা কোথায় পেলেন আপনি?
নিজেই বানিয়ে নিলাম।
মানে?
আমার শরীরে।
আপনার শরীরে?
হ্যাঁ, শরীরে বসিয়ে নিলাম।
ন্যানোটেক? এ রকম কোনো ন্যানোটেকের কথা তো শুনিনি! কী বলছেন আপনি? ম্যাক্সের চোখে বিভ্রান্ত দৃষ্টি।
পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ডেটাবেজ হলো মানুষের ডিএনএ। ৩৩ জেটাবাইট ডেটা সংরক্ষণ করে রাখতে পারে। আমি আমার কয়েকটি কোষের ডিএনএতে সার্ভার বসিয়ে নিই।
কীভাবে!
ডিএনএ এক্সট্রাকশন জটিল কিছু না। মানুষ আগেও ডিএনএকে ডেটাবেজ হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করেছে। সমস্যা ছিল, মানুষের জিনোম কোড এত দিন উন্মুক্ত ছিল না পুরোপুরি। জিনোম কোড যখন সম্পূর্ণ উন্মুক্ত হয়, তখনই মানুষ ডিএনএ পড়তে শেখে। কিন্তু ওতে ডেটা রেখে সেটা ব্যবহারের উপায় জানা ছিল না।
আমি ডিএনএ এক্সট্রাক্ট করে নিই নিজের দেহ থেকে। এরপর ওটার জাঙ্ক অংশটিতে ঢুকিয়ে দিই প্রয়োজনীয় সব ডেটা ও অ্যালগরিদম। পুরো জিনিসটা পড়ার জন্য একটা ওয়্যারলেস রিডার ও রিলে দরকার ছিল। সেটা নিয়ে খানিকটা সমস্যায় পড়েছিলাম। পরে ভাবলাম, এম-আরএনএটাকে একটু মডিফাই করে নিলেই হয়। সেটা করে নিতেই হয়ে গেল।
আমাদের ডিএনএর কোড চার অক্ষরের। কম্পিউটারের কোড হলো ০ আর ১। এই রূপান্তর এমনিতেও খুব জটিল কিছু না। এম-আরএনটাকে এ অনুসারে একটু বদলে দিয়ে ওতে ন্যানো রিডার ও রিলে যুক্ত করে দিলাম। এরপর এই কোষগুলোকে ঢুকিয়ে দিলাম শরীরে।
ডিএনএ স্টোরেজ সংগ্রহ করার জন্য ডিএনএটাকে লবণ দিয়ে মুড়িয়ে রাখা প্রয়োজন। সে জন্য শরীরের কিছু প্রোটিনকে মডিফাই করতে হয়েছে। সে জন্যই লবণ এত বেশি পেয়েছেন শরীরে।
পরের প্রায় চার মাস আমি স্থির বসেছিলাম। এ সময় আমার শরীরে ডিএনএ রেপ্লিকেশন হয়েছে। আমার মডিফায়েড ডিএনএ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো দেহে। আর শরীর নিজের স্বাভাবিক নিয়মেই শীতল রেখেছে এই ডিএনএ স্টোরেজ।
পুরো পৃথিবী আর্টের ওপর নির্ভর করে এগিয়ে যাচ্ছিল। আপনি এই সবকিছু ধ্বংস করে দিলেন। আপনি জানেন, কী করেছেন? কতটা ক্ষতি করেছেন পৃথিবীর? আপনার মৃত্যুদণ্ড হতে পারে এ জন্য।
উঁহু, স্থির বসেছিলাম বলা ভুল হলো। স্লিংশট দীর্ঘদিন ধরেই আমাকে রিক্রুট করতে চাইছিল। সে জন্য আমি এই চার মাসে কয়েকবার তাদের অফিসে বসেছি। ওরা চাইছিল, আমি যেন আর্টের কোডে আরও খানিকটা উন্নতি করি। আর্ট অনেকটা হিউম্যানয়েড হয়ে উঠেছে। কিন্তু ইলজিক্যাল আচরণ ঠিক বুঝতে পারত না। আমি কাজ করছিলাম সেটা নিয়ে।
ইলজিক্যাল মানে?
মানে ধরুন, আগামীকাল আপনার একটা গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা আছে। আগের দিন ভালো করে পড়ার কথা। কিন্তু প্রেমিকা আপনাকে ঘুরতে যেতে প্রস্তাব দিলেন। আপনি তখন আর যৌক্তিক কাজটা করবেন না, অযৌক্তিকভাবে পড়াশোনা বাদ দিয়ে চলে যাবেন ঘুরতে। এই ইলজিক্যাল আচরণ কম্পিউটার বুঝতে পারে না। তাঁকে সেটা বোঝানো খুব সহজও নয়।
এরপর সবাই চুপ। ম্যাক্স কিছুক্ষণ পর আবার জিজ্ঞাসা করলেন, তারপর? কীভাবে কী করলেন?
সেটা খুব কঠিন কিছু নয়। দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে নেওয়ার মতো ব্যাপার। আপনারা বরং এ নিয়ে আর কী জানতে চান, সেটা বলুন।
পুরো পৃথিবী আর্টের ওপর নির্ভর করে এগিয়ে যাচ্ছিল। আপনি এই সবকিছু ধ্বংস করে দিলেন। আপনি জানেন, কী করেছেন? কতটা ক্ষতি করেছেন পৃথিবীর? আপনার মৃত্যুদণ্ড হতে পারে এ জন্য।
মিস তানিয়া হেসে ফেললেন। গলা খুলে হাসছেন। হাসলে তাঁকে বড় সুন্দর লাগে। হাসতে হাসতেই তিনি বললেন, আমি মারা যাচ্ছি, মিস্টার। নিজের জাঙ্ক ডিএনএ মডিফাই করার শাস্তি। বিজ্ঞানীরা জানতেন না, এই ডিএনএগুলোর কাজ কী। তবে জেনেটিক ফিঙ্গারপ্রিন্টের জন্য এগুলো বড় কাজের, এটুকু তাঁরা জানতেন। আমি এখন জানি, মানুষের বয়স বাড়া-কমার বিষয়টিও এই জাঙ্ক ডিএনএ নামের অংশটিই নিয়ন্ত্রণ করে। আমি এসব ডিএনএ মডিফাই করার সময় কিছু একটা ভুল করেছি। আমার বয়স ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। ঠিক সেই প্রাচীনকালের বিখ্যাত সিনেমা দ্য কিউরিয়াস কেস অব বেঞ্জামিন বাটন-এর মতো।
***
পাঁচ বছর পর।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল গবেষণাগার। ম্যাক্স ভিজিটে এসেছে গবেষণাগারে। একটি শিশু শুয়ে আছে ক্রিবে।
শিশুটি আ আ করতে করতে একটা আঙুল মুখে পুরে দিল। ম্যাক্স অবাক কৌতূহলে তাকিয়ে রইল শিশুটির দিকে। পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান ডিএনএর অধিকারী এই শিশুটির শেষ পরিণতি কী হবে, কেউ জানে না।
