আত্মজীবনী ‘সোর্স কোড’ লিখতে যেসব বই থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছেন বিল গেটস
২০২৫ সালের শুরুতে প্রকাশিত হয়েছে বিল গেটসের আত্মজীবনী সোর্স কোড। সত্তরের দশকের শেষ দিকে মাইক্রোসফটের শুরুর কথা আর অ্যাপলের সঙ্গে চুক্তির গল্প নিয়ে সাজানো হয়েছে বইটি। অন্য যেকোনো নতুন কাজ শুরুর মতোই এ বই লেখার আগেও অন্যদের লেখা বেশ কিছু আত্মজীবনী পড়েছেন তিনি। কেমন ছিল তাঁর আত্মজীবনী লেখার অভিজ্ঞতা?
এর উত্তরে বিল গেটস বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, আমি প্রতিদিনই শিখি। নতুন একটা কাজ শুরু করার সময় আমার শেখা শুরু হয়। মাইক্রোসফটের শুরুর দিকে আমি প্রচুর প্রযুক্তি সম্পর্কিত বই পড়তাম। গেটস ফাউন্ডেশন তৈরির প্রাক্কালে পড়তাম বিখ্যাত ফিলানথ্রপিস্টদের জীবনী। সোর্স কোড যখন লেখা শুরু করলাম, তখনও ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আমার পরিচিত মানুষদের আত্মজীবনী পড়তে শুরু করেছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদিও সব বই যে সোর্স কোড লেখার সময়ই পড়া হয়েছে, তা নয়। বিভিন্ন সময়ে পড়া বইগুলো আমাকে সোর্স কোড লিখতে সাহায্য করেছে। এই বইগুলোর সঙ্গে সোর্স কোড বইয়ের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। তবে তাঁরা যেভাবে নিজেদের গল্প বলেছেন, নিজেদের উত্থান-পতনের কথা বলেছেন, তার সঙ্গে আমার গল্প বলার ঢঙে কিছুটা মিল রয়েছে।’
সেসব বই নিয়ে নিজের ভাষায় বলেছেন বিল গেটস।
পার্সোনাল হিস্ট্রি: ক্যাথেরিন গ্রাহাম
ওয়াশিংটন পোস্টের বিখ্যাত পাবলিশার ক্যাথেরিন গ্রাহামের সঙ্গে আমার পরিচয়ের দিনটা এখনো মনে আছে—৫ জুলাই, ১৯৯১। সেদিন আমার সঙ্গে ওয়ারেন বাফেটেরও পরিচয় হয়েছিল। যাদের সঙ্গে পরে আমার দারুণ বন্ধুত্ব হয়েছে। ক্যাথেরিন গ্রাহাম যখনই নিজের জীবন নিয়ে কথা বলতেন, তখনই আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনতাম। তিনি ওয়াশিংটন পোস্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর হাতেগোনা কয়েকজন নারী সেই জায়গায় কাজ করতেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের বিপক্ষে দাঁড়ানো, ওয়াটারগেট ও পেন্টাগন কেলেঙ্কারিতে নিজের সুদৃঢ় অবস্থান জারি রাখা—প্রতিটি পদক্ষেপ আমাকে অবাক করে। এই বই পড়ে আমি বুঝতে পেরেছিলাম, একজন নেতার জন্ম হতে পারে যেকোনো জায়গা থেকেই।
চেজিং হোপ: নিকোলাস ক্রিস্টফ
১৯৯৭ সালে নিকোলাস ক্রিস্টফ একটা আর্টিকেল লেখেন। সেটাই আমার জীবনকে পুরোপুরি বদলে দেয়। অনুন্নত দেশগুলোতে প্রতিদিন হাজার হাজার শিশু ডায়রিয়ায় মারা যায়। লেখাটি দেখেই আমি সিদ্ধান্ত নিই, আমিও সমাজসেবা করতে চাই। তখন থেকে আমি নিকের কাজের খোঁজখবর নিতে শুরু করি।
১৫০টিরও বেশি দেশে ঘুরে তিনি নিজ চোখে দেখেছেন তাদের দুর্দশা। যুদ্ধ, দারিদ্র্য, কুসংস্কার কীভাবে দেশগুলোকে শেষ করে দিতে পারে, সেই গল্প নিজেই লিখেছেন তিনি। তবে নিক আশাবাদী ছিলেন, কেউ না কেউ পৃথিবীকে এই দুর্দশা থেকে মুক্তি দেবে। পৃথিবীতে আরও কয়েকজন নিক থাকলে পৃথিবীটা আরও বেশি সুন্দর হতো।
এডুকেটেড: তারা ওয়েস্টওভার
তারা ওয়েস্টওভার বড় হয়েছেন ইডাহো স্টেটের এক কুসংস্কারাচ্ছন্ন পরিবারে। যেখানে তাঁর বাবা-মা তাঁকে আটকে রাখতেন চার দেয়ালের মাঝে। কারণ, তাঁদের বিশ্বাস ছিল পৃথিবীর ধ্বংস ঘনিয়ে আসছে। সেই রক্ষণশীল পরিবার থেকে ছাড়া পেয়ে কীভাবে নিজ প্রচেষ্টায় নিজেকে গড়ে তুলেছেন, সেই গল্প লিখেছেন তিনি।
ছোটবেলায় আমরা মনে মনে ভাবি, মা-বাবা বোধহয় সবকিছুই জানেন। কিন্তু বড় হতে হতে আমরা বুঝতে পারি, তাঁরা আসলে অনেক কিছুই জানেন না। এই জানা-অজানার পার্থক্যটার মধ্যে যে আমাদের বেড়ে ওঠা, সেই গল্প গুছিয়ে তুলে এনেছেন তিনি।
বর্ন এ ক্রাইম: ট্রেভর নোয়াহ
আমি যখন বড় হয়েছি, তখন মনে হতো আমি বোধহয় সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছি না। ট্রেভর নোয়াহ তাঁর আত্মজীবনীতে সেই মানিয়ে নিতে না পারার গল্প লিখেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া নোয়াহ বেড়ে উঠেছেন মিশ্র বর্ণের পরিবারে। সে সময় সেখানে ছিল চূড়ান্ত পর্যায়ের বর্ণবাদ। কৃষ্ণাঙ্গ-শ্বেতাঙ্গ সম্পর্ক যেখানে ছিল রীতিমতো নিষিদ্ধ।
২০১৭ সালে আমি বলেছিলাম, বইটি পড়ে মনে হচ্ছিল সারা জীবনে যেসব জায়গায় তাঁকে আটকে দেওয়া হয়েছে, কিংবা কোণঠাসা করার চেষ্টা করেছে, সেসব জায়গার কথা এক করেছেন তিনি। তাঁর নিত্যনতুন কমেডি স্টাইল বইটিকে করেছে অনবদ্য।
সারেন্ডার: বোনো
একদিক দিয়ে আমি খুবই ভাগ্যবান। আমার মধ্যে যখন কম্পিউটার নিয়ে আগ্রহ শুরু হয়েছিল, তখন বাবা-মা আমাকে অনেক সাহায্য করেছিলেন। কিন্তু বোনোর গান গাওয়া নিয়ে মা-বাবার চিন্তাভাবনা ছিল ভিন্ন। তাঁকে একপ্রকার দূরে দূরেই সরিয়ে রাখতেন তাঁরা। সন্তানের আগ্রহের প্রতি বাবা-মায়ের অনাগ্রহ কতটা প্রভাব ফেলে শিশুদের ওপর, বোনোর লেখায় উঠে এসেছে সেটাই।
এখন যত বড় কনসার্টই আয়োজন করুন না কেন, ছোটবেলায় বাবার কাছ থেকে পাওয়া অনাগ্রহ এখনো তাঁকে কুরে কুরে খায়। তাঁর সব সময় ‘আমাকে কারও কাজে আসতেই হবে’ মনোভাব তাঁকে জীবনে অতৃপ্ত করে রাখে। এই বই পড়েই আমি সিদ্ধান্ত নিই, নিজের বইয়ে আমার চ্যালেঞ্জ আর সমস্যার কথা খোলাখুলি বলতে চাই।