আরও যোগ আরও গুণ

গত পর্বে দেখিয়েছিলাম, কীভাবে যোগ করে গুণ করতে হয়। আজকের পর্বেও যোগ করে গুণ করাই শিখব। তবে আজ শিখব একটু বড় গুণ। শুরুর দিকে যে কৌশল শিখিয়েছি, সেখানে বৃত্তের মধ্যে সংখ্যা দুটির গুণফল দশের বেশি হলে এ নিয়ম কাজ করত না। এ ব্যাপারে থিয়ারার আপত্তি ছিল প্রবল। কেন এ নিয়ম এক্ষেত্রে কাজ করবে না? এই নিয়মে করলে ভুলটা কোথায় হবে? নানান প্রশ্ন ওর। তবে সেটা ছিল বিয়োগ করে গুণ। কিন্তু যোগ করে গুণের ক্ষেত্রে এরকম কোনো নিয়ম নেই। বৃত্তের ভেতরের সংখ্যা ১০-এর চেয়ে বেশি হলেও কোনো সমস্যা নেই। চলো, একরকম একটা গুণ দেখি আগে।

ধরো, আমরা ১৩-এর সঙ্গে গুণ করব ২১। এক্ষেত্রেও আমরা রেফারেন্স নাম্বার ধরব ১০। তাহলে ১০ থেকে ১৩ সংখ্যাটি ৩ বড় এবং ১০ থেকে ২১ সংখ্যাটি ১১ বড়।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

এই বেশি সংখ্যাটুকু অর্থাৎ, ৩ ও ১১ বৃত্তের মধ্যে বসে যাবে। এবার কোণাকুণি যোগ করতে হবে। ২১ ও ৩ যোগ করা সহজ। সুতরাং, আমরা ২১ ও ৩ বা ১৩ ও ১১ যোগ করে পাব ২৪। এই ২৪-এর সঙ্গে ১০ গুণ করলে হবে ২৪০। এটা সমান চিহ্নের ডানপাশে বসিয়ে দেব। তুমি সরাসরি ১০ গুণ না করতে পারলেও সমস্যা নেই। সেক্ষেত্রে যোগফলটা সমান চিহ্নের ডানপাশে লিখবে। অর্থাৎ, ২৪। এবার রেফারেন্স নাম্বার ১০। হিসাব করতে হবে রেফারেন্স নাম্বারে কতটি শূন্য আছে। যতটা শূন্য থাকবে, তুমি ঠিক ততটা শূন্য যোগফলের সামনে লিখে দেবে। ব্যস, তাহলেই গুণের কাজটা হয়ে যাবে। যেমন, রেফারেন্স নাম্বার যদি থাকে ১০০, তাহলে তুমি যোগফলের সঙ্গে দুটি শূন্য বসিয়ে দেবে।

তাহলে, সমান চিহ্নের ডানপাশে বসালে ২৪০। এবার বৃত্তের ভেতরের সংখ্যা দুটি, মানে ৩ ও ১১ গুণ করতে হবে। গুণফল ৩৩-এর সঙ্গে যোগফল ২৪০ যোগ করলেই হলো। তাহলে উত্তর পেলাম ২৭৩। খুব সহজ, তাই না?

এবার তুমি একটা গুণ করো তো একই নিয়মে। ১৭-এর সঙ্গে ১৩ গুণ করতে হবে। ঝটপট গুণটা করে ফেল। তারপর উত্তর মেলাও। আমি কিন্তু মাথার মধ্যে গুণটা করে ফেলেছি। উত্তর দেখতে পাচ্ছি ২২১। দেখ তো, তোমার উত্তরও ২২১ হয় কি না!

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

দেখ, ১৭-এর সঙ্গে ১৩ গুণ করতে হবে। খাতা-কলম না ধরে মনে মনে গুণটা করার চেষ্টা করো। ১৭ মানে ১০-এর চেয়ে ৭ বেশি। আর ১৩ মানে ৩ বেশি। ১৭ ও ১৩-এর ওপরে দুটি বৃত্ত কল্পনা করো। তুমি কল্পনায় দেখতে পাচ্ছ, বৃত্ত দুটিতে যথাক্রমে ৭ ও ৩ লেখা আছে। এবার কোণাকুণি যোগের পালা। বলেছিলাম, তুলনামূলক সহজ যোগটা করবে সবসময়।

তাহলে, ১৭-এর সঙ্গে ৩ যোগ করলে হবে ২০। রেফারেন্স নাম্বারে আছে একটা শূন্য। অর্থাৎ, সমান চিহ্নের ডানপাশে হবে ২০০। মানে, ২০-এর পরে একটা শূন্য বসিয়ে দিতে হবে। ব্যস, বেশির ভাগ কাজ শেষ। এখন শুধু বৃত্তের সংখ্যা দুটি গুণের পালা। তুমি যদি জানো, ৭-এর সঙ্গে ৩ গুণ করলে ২১ হয়, তাহলে ২০০-এর নিচে বসাও ২১। এবার যোগ করলে হবে ২২১।

এবার ধরো, তুমি ৭ ও ৩ গুণ করতে পারো না অথবা থিয়ার মতো তুমি নামতা শিখতে চাও না। তাহলে উপায়? উপায় একটা আছে। আগের নিয়মে (গুণের সহজ কৌশল) ৭ ও ৩ গুণ করতে হবে। ওপরের লিংক থেকে গুণের সহজ কৌশল শিখে এই সমাধানটা করতে পারো। আমরা এখানে মনে মনে গুণটা করব।

৭ ও ৩ দুটি সংখ্যাই ১০-এর চেয়ে ছোট। তাহলে ১০ থেকে ৭ ও ৩ বিয়োগ করব। একটা বৃত্তে বসবে ৩, বাকিটায় ৭। এবার কোণাকুণি বিয়োগ। ৭ থেকে ৭ বা ৩ থেকে ৩ বিয়োগ করলে পাব ০। সমান চিহ্নের ডানপাশে লিখব ০। রেফারেন্স নাম্বার ১০। মানে, একটা শূন্য। তাহলে ডানপাশে একটা শূন্য বসালাম। এবার হলো দুটি শূন্য, মানে ০০। যাহোক, এবার বৃত্তের মাঝে থাকা সংখ্যা দুটি গুণ করে ০০-এর সঙ্গে যোগ করতে হবে। বুঝতেই পারছ, ঘুরেফিরে আমরা একই জায়গায় পৌঁছেছি। মানে ৩ ও ৭ আমাদের গুণ করতেই হবে। গুণ করা ছাড়া আর একটি উপায় আছে। হয় ৭-কে তিনবার যোগ করতে হবে, অথবা ৩-কে ৭ বার যোগ করতে হবে। ৭ + ৭ + ৭ = ২১। ০০-এর সঙ্গে ২১ যোগ করতে হবে। তাহলে, পাব ২১।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

এবার ফিরে যাই সেই ১৭ ও ১৩-এর গুণে। ডান পাশে পেয়েছিলাম ২০০। এই ২১-কে ২০০-এর সঙ্গে যোগ করতে হবে। যোগফল পেলাম ২২১। এটাই উত্তর।

এখানে বলে রাখি, ৭ ও ৩ সরাসরি গুণ করে দিলে ওপরের এতদূর আসতে হবে না। সমাধানটা আরও আগেই হয়ে যাবে। আজ তবে এখানেই থাক। আগামীপর্বে যোগ করে বড় গুণ শিখব। ততক্ষণ এই গুণগুলোই প্র্যাকটিস করো। মাঝেমধ্যে আগের কৌশলগুলোও চর্চা করো কিন্তু। না হলে সব ভুলে বসবে।

লেখক: সম্পাদনা দলের সদস্য, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: স্পিড ম্যাথ অবলম্বনে


প্রথম পর্ব: গুণের সহজ কৌশল

দ্বিতীয় পর্ব: গুণের আরও সহজ কৌশল

তৃতীয় পর্ব: বড় গুণের সহজ কৌশল

চতুর্থ পর্ব: বড় গুণের আরও সহজ কৌশল

পঞ্চম পর্ব: দ্বৈত গুণের সহজ পদ্ধতি

ষষ্ঠ পর্ব: যোগ করে গুণ করি