ডেভিড অ্যাটেনবরো সম্পর্কে এই ১০ তথ্য জানেন কি

ডেভিড অ্যাটেনবরোছবি: এনএইচএম

বয়স ১০০ ছুঁই ছুঁই করছে, অথচ এখনো থামার নাম নেই! অবসরে যাওয়ার বয়স পেরিয়ে গেছেন প্রায় তিন দশক আগেই, কিন্তু এখনো তিনি যেন চির তরুণ। ক্লান্তি শব্দটাই যেন তাঁর জীবনের খাতায় নেই। বলছি ডেভিড অ্যাটেনবরোর কথা। আজ তাঁর ৯৯তম জন্মদিন। এ জন্মদিন উপলক্ষে বড় পর্দায় মুক্তি পাচ্ছে তাঁর নতুন প্রামাণ্যচিত্র ওশান (Ocean)। জন্মশতবর্ষে এই প্রকৃতিবিদ সম্পর্কে জানুন ১০টি তথ্য। দেখুন তো, এর মধ্যে আপনি কয়টা জানতেন!

ছবি: বিবিসি

১. জীবনের প্রথম চাকরির আবেদনই বাতিল করে দিয়েছিল বিবিসি!

আজ যিনি বিবিসির ইতিহাসে সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকাদের একজন, তাঁর পথচলার শুরুটা মোটেও সহজ ছিল না। ১৯৫২ সালে ডেভিড অ্যাটেনবরো বিবিসিতে রেডিও প্রযোজক হওয়ার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তা বাতিল করে দেয় বিবিসি। ভাগ্য ভালো, বিবিসি খুব দ্রুতই তাদের ভুলটা বুঝেছিল। ওই একই বছরে তাঁকে পূর্ণকালীন কর্মী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে ১৯৬৫ সালে তিনি বিবিসি টু-এর কন্ট্রোলার নিযুক্ত হন। এখান থেকেই শুরু হয় এক যুগান্তকারী অধ্যায়।

আরও পড়ুন

২. নিজের গাড়ি নেই, তাই শেখেননি ড্রাইভিংও!

মানুষটার বয়স প্রায় একশো ছুঁই ছুঁই, কিন্তু এখনও ড্রাইভিং টেস্টই দেননি! কারণ, তিনি কখনো গাড়ি চালানো শেখেননি। গাড়িই নেই, গাড়ি চালানো শিখেই বা কী হবে? ব্যক্তিগত গাড়ির প্রয়োজন বোধ করেননি বলে তিনি গাড়ি কেনেননি। এমনকি, নিজের টিমের সঙ্গে থাকার জন্য দীর্ঘদিন তিনি বিমানের ইকোনমি ক্লাসে বসে যেতেন। তবে ৭৫ বছর বয়সে বিজনেস ক্লাসে যাতায়াত শুরু করেন।

৩. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তাঁদের বাড়িতে আশ্রয় পেয়েছিল দুই ইহুদি বোন

ডেভিড অ্যাটেনবরোর মা-বাবা মেরি ও ফ্রেডেরিক ছিলেন মানবতাবাদী মানুষ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি জার্মানি থেকে পালিয়ে আসা দুই ইহুদি শিশু হেলগা ও আইরিনকে তাঁরা নিজেদের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন। এই দুই বোন ‘কিন্ডারট্রান্সপোর্ট’ নামে একটি কর্মসূচির মাধ্যমে ব্রিটেনে এসেছিল। তারপর টানা সাত বছর ছিল অ্যাটেনবরোদের সঙ্গে। পরে ওদের বাবা-মা মারা যাওয়ার পর অ্যাটেনবরোর পরিবারই তাদের দত্তক নেয়।

আরও পড়ুন
স্যার ডেভিড অ্যাটেনবরো
ছবি: রয়টার্স

৪. ২০১৩ সালে তাঁর হৃদযন্ত্রে বসানো হয়েছিল পেসমেকার

এখনো চির তরুণ মনে হলেও ডেভিড অ্যাটেনবরোর শরীরেও পড়েছে সময়ের ছাপ। ২০১৩ সালের জুন মাসে তাঁর হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানো হয়। এর জন্য তাঁকে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত একটি বড় সফর বাতিল করতে হয়েছিল। এর ঠিক দুই বছর পর আবার তাঁর হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করে দুটি কৃত্রিম হাঁটু বসানো হয়। তবু থামেননি তিনি। বরং অ্যাটেনবরো বলেছেন, ‘কয়লা খনিতে কাজ অর্থ উপার্জন করতে পারলে আমি সত্যিই খুশি হতাম। কিন্তু আমি তা করিছি না। বরং বিশ্বের নানা প্রান্তে ঘুরে দারুণ দারুণ জিনিসগুলো দেখছি আমি। এর চেয়ে সৌভাগ্য আর কী হতে পারে?’

স্যার ডেভিড অ্যাটেনবরো
ছবি: রয়টার্স

৫. ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি আছে অ্যাটেনবরোর

দুইবার নাইট উপাধি পেয়েছেন—একবার ১৯৮৫ সালে, আরেকবার ২০২২ সালে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। স্যার ডেভিড অ্যাটেনবরো পেয়েছেন ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিগ্রি। বিজ্ঞানের প্রতি তাঁর অসামান্য অবদান এবং শিক্ষামূলক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ ও ডারহ্যামের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাঁকে এই ডিগ্রি দিয়েছে। 

আরও পড়ুন
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

৬. ভিড় একদমই পছন্দ করেন না তিনি

টিভি দুনিয়ার জীবন্ত কিংবদন্তি অ্যাটেনবরো। কিন্তু তিনি নিজে মোটেই প্রচার-প্রচারণা পছন্দ করেন না। বরং বেশি মানুষের ভিড়ে তিনি বেশ অস্বস্তি বোধ করেন। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘আমি ভিড় একেবারেই অপছন্দ করি। মানুষ যখন কোনো কিছু নিয়ে হইচই করে, তখন তারা যুক্তিবুদ্ধি হারিয়ে ফেলে।’

৭. অনেক মাধ্যমে বাফটা পুরস্কার জয়ী একমাত্র মানুষ অ্যাটেনবরো

টেলিভিশনের ইতিহাসে এক অসাধারণ রেকর্ড গড়েছেন স্যার ডেভিড অ্যাটেনবরো। তিনি একমাত্র ব্যক্তি, যিনি সাদা-কালো, রঙিন, এইচডি (HD) ও থ্রিডি (3D) টেলিভিশন প্রোগ্রামের জন্য বাফটা পুরস্কার জিতেছেন। আট দশকের ক্যারিয়ারে তাঁর ঝুলিতে আছে আটটি বাফটা পুরস্কার। তিনি প্রথম বাফটা পুরস্কার পান ১৯৬১ সালে। আর শেষটি পেয়েছেন ২০১৮ সালে ‘ব্লু প্ল্যানেট ২’-এর জন্য।

আরও পড়ুন
গ্রেট ​ব্যারিয়ার রিফে প্রবাল দেখছেন ডুবুরিরা
ছবি: এএফপি

৮. গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের তলদেশ পর্যন্ত গেছেন তিনি

৯০ বছর বয়সেও ডেভিড গিয়েছিলেন সমুদ্রের তলদেশে। ২০১৬ সালে তিনি নেমেছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রবালপ্রাচীর গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের প্রায় এক হাজার ফুট গভীরে। এই একই রিফে তিনি প্রথম স্কুবা ডাইভ করেছিলেন ৬০ বছর আগে, ১৯৫৭ সালে। তবে এই অভিযান শুধু রোমাঞ্চের জন্য ছিল না। তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন রিফের বর্তমান অবস্থা নিয়ে। অ্যাটেনবরো বলেছিলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের দুটি বড় বিপদ হলো সমুদ্রের তাপমাত্রা ও অম্লতা বেড়ে যাওয়া।’

৯. সন্তানদের বোঝা হওয়ার ভয়টাই তাঁর সবচেয়ে বেশি

অ্যাটেনবরোর ব্যক্তিগত জীবন অনেকটা আড়ালে থাকলেও এক সময় তিনি অকপটে স্বীকার করেছিলেন, তাঁর সবচেয়ে বড় ভয় সন্তানদের বোঝা হয়ে যাওয়া। স্ত্রী জেন ইবসওয়ার্থ ওরিয়েলের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ ৪৭ বছরের দাম্পত্য জীবন ছিল। তাঁদের দুই সন্তান—রবার্ট ও সুসান। রবার্ট এখন অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে জীববিজ্ঞানের নৃতত্ত্বের অধ্যাপক। আর সুসান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন, বর্তমানে বাবার সঙ্গেই কাজ করছেন। ১৯৯৭ সালে স্ত্রীর মৃত্যুর পরও সন্তানদের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক রেখেছেন ডেভিড। তাঁর দুটি নাতি-নাতনিও আছে। তবু তাঁর সবচেয়ে বড় আতঙ্ক—যেন ছেলেদের বোঝা না হয়ে যান!

আরও পড়ুন
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

১০. ইঁদুর ছাড়া সব প্রাণীই পছন্দ তাঁর

প্রাণীজগতের প্রতি অকুণ্ঠ ভালোবাসা অ্যাটেনবরোর। কিন্তু তবু একটিমাত্র প্রাণীকে তিনি সহ্য করতে পারেন না—ইঁদুর! সলোমন দ্বীপপুঞ্জের এক গ্রামে খড়ের ছাউনি দেওয়া কুঁড়ে ঘরে থাকার সময় তাঁর এই ভয় জন্মায়। তিনি বলেন, ‘আমি সত্যিই ইঁদুরকে ঘৃণা করি। বিষাক্ত মাকড়সা, সাপ, বিছা—সবই আমি নির্দ্বিধায় হাতে নিয়েছি। কিন্তু ইঁদুর দেখলে নিজেকে সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে।’

সূত্র: সাগা ম্যাগাজিন