ধরো, তোমার এক বন্ধু কোনো পার্কে বসে আছে। তুমি তার সঙ্গে দেখা করবে। পার্কের কাছে গিয়ে ফোন দিলে বন্ধুকে। জানালে নিজের অবস্থান। বন্ধু তোমাকে জানালো, আর ৫ মিনিট হাঁটলেই তাকে পাবে। আরও নিশ্চিত করতে তোমাকে জানাল, ১০০ মিটারের মতো হেঁটে গেলে বন্ধুকে পার্কের বেঞ্চে বসা পাবে। এই তথ্য থেকে কি তুমি বন্ধুকে খুঁজে পাবে? বন্ধুর আসল অবস্থান কি এতে বোঝা গেল? না, বোঝা যায়নি। কারণ, ১০০ মিটার তুমি কোন দিকে হাঁটবে? সামনে, নাকি পেছনের দিকে; ডানে নাকি বাঁয়ে? কিন্তু তোমার বন্ধু যদি বলত, সে ১০০ মিটার পূর্ব দিকে আছে, তাহলে সহজে তার অবস্থান বুঝতে পারতে। এটা শুধু একটা উদাহরণ। বোঝাতে চাইছি, শুধু মান দিয়ে সবকিছু পুরোপুরি প্রকাশ করা যায় না। মানের পাশাপাশি দিকও জানতে হয় আমাদের মাঝেমধ্যে।
আগের পর্বে বলেছিলাম, বস্তুজগতে যা কিছু পরিমাপ করা যায়, তাই হলো রাশি। শব্দটা ভারিক্কি—পদার্থবিজ্ঞানের ভাষা, তাই। তুমি শুধু অর্থটার দিকে খেয়াল করো। প্রতিটি রাশির ‘একক’ থাকে—এটা আসলে সেই রাশিকে মাপার জন্য একধরনের মাপকাঠি, মানে যার সঙ্গে তুলনা করে রাশিটির পরিমাণ বোঝা যায়। ধরো, তুমি নিজের বিছানায় বসে আছ। বিছানা থেকে পড়ার টেবিল পর্যন্ত যেতে তোমাকে দশবার পা ফেলতে হয়। তাহলে, এখানে ‘পা’-ই একক।
রাশির কথায় ফিরি। এই রাশি আবার দুই প্রকার। ভেক্টর রাশি ও স্কেলার রাশি। যে রাশিকে শুধু মান (Magnitude) দিয়েই প্রকাশ করা যায়, সেটাই স্কেলার রাশি। এর জন্য কোনো দিক বলে দিতে হয় না। আর যে রাশিকে পুরোপুরি প্রকাশের জন্য মানের পাশাপাশি দিকও (Direction) প্রয়োজন হয়, তা-ই ভেক্টর রাশি।
ধরো, তোমাকে কেউ জিজ্ঞেস করল, তোমার কান কয়টা? তুমি উত্তর দিলে, দুটি। এই যে শুধু সংখ্যা শুনেই বুঝে গেলে—কানটা কোন দিকে আছে, কীভাবে আছে—সেসব না শুনেই সবটা বুঝে গেলে, এটাই স্কেলার রাশি।
এখন আমরা ভেক্টর রাশি কী, তা বুঝব। ধরো, তোমার এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলে, স্কুল থেকে তার বাড়ির দূরত্ব কত। সে বলল, ২ কিলোমিটার। এটাই স্কেলার রাশি। ‘দূরত্ব’ একধরনের স্কেলার রাশি। কিন্তু তোমার বন্ধু যদি বলে, তার বাড়ি স্কুল থেকে উত্তর দিকে ২ কিলোমিটার দূরে, তাহলে তা হবে ভেক্টর রাশি। কারণ এখানে মানের (২ কিলোমিটার) পাশাপাশি দিকও (উত্তর দিক) উল্লেখ করা আছে।
এবার সংক্ষেপে ভেক্টর ও স্কেলার রাশির মূল পার্থক্যগুলো দেখে নিই।
দুটি স্কেলার রাশিকে সহজেই তাদের মান দিয়ে তুলনা করা যায়। যেমন, ৫ কেজি চাল ৩ কেজি চালের চেয়ে বেশি। কিন্তু দুটি ভেক্টর রাশিকে তুলনা করার সময় এর মান এবং দিক—দুটোই বিবেচনা করতে হয়। দুটি ভেক্টর রাশি তখনই সমান হবে, যখন তাদের মান এবং দিক দুটোই একই হবে। ধরা যাক, দুটি গাড়ি একই জায়গা থেকে চলতে শুরু করল। প্রথম গাড়িটি প্রতি ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে (খেয়াল করো, কোন দিকে যাচ্ছে, তা এখানে বলা নেই)। আর দ্বিতীয় গাড়িটি ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার বেগে পূর্ব দিকে যাচ্ছে। যেহেতু দ্বিতীয় গাড়ির ক্ষেত্রে মান ও দিক দুটোই বলা আছে, তাই এখানে বেগ হলো ভেক্টর রাশি।
আগে যেমনটা বললাম, খেয়াল করার বিষয় হলো, দুটি গাড়িই কিন্তু ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার অতিক্রম করেছে। কিন্তু প্রথম গাড়ির ক্ষেত্রে শুধু মান বলা হয়েছে। তাই এটি স্কেলার রাশি। আর দ্বিতীয় গাড়ির ক্ষেত্রে মানের পাশাপাশি নির্দিষ্ট দিকও উল্লেখ করা হয়েছে। তাই এটা, এ ক্ষেত্রে ‘বেগ’, ভেক্টর রাশি।
পরের পর্বে আমরা স্কেলার ও ভেক্টর রাশির কিছু উদাহরণ নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করব। পাশাপাশি বহুল প্রচলিত কিছু স্কেলার ও ভেক্টর রাশি এবং তাদের পার্থক্য নিয়ে আলাপ করব। তবে মূল বিষয়টা তো তুমি বুঝেই গেছ— আসলে দিকের ধারণাটাই মূল পার্থক্য গড়ে দেয়।