কালপুরুষ নীহারিকারকে বলা হয় নক্ষত্রের আঁতুড়ঘর। ইংরেজিতে কথাটা হলো ‘স্টেলার নার্সারি’। অর্থাৎ এ অঞ্চলে নিয়ত জন্ম নেয় নতুন নতুন নক্ষত্র।
সম্প্রতি জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ তাকিয়েছিল ওরিয়ন নেবুলা বা কালপুরুষ নীহারিকার দিকে। তুলেছে অবিশ্বাস্য সুন্দর এ নীহারিকার দারুণ এক ছবি। ২ অক্টোবর, মঙ্গলবার এ ছবি প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসা। এটিই জেমস ওয়েব নভোদুরবিনের তোলা কালপুরুষ নীহারিকার প্রথম ছবি। ইসা একইসঙ্গে এ ছবি তাদের ওয়েবসাইট ও ইসাস্কাই (ESASky) ওয়েব অ্যাপে উন্মুক্ত করে দিয়েছে সবার জন্য।
কালপুরুষ নীহারিকারকে বলা হয় নক্ষত্রের আঁতুড়ঘর। ইংরেজিতে কথাটা হলো ‘স্টেলার নার্সারি’। অর্থাৎ এ অঞ্চলে নিয়ত জন্ম নেয় নতুন নতুন নক্ষত্র। আকাশের অন্যতম উজ্জ্বল এ নীহারিকার আরেক নাম মেসিয়ার ৪২। পৃথিবী থেকে এর অবস্থান প্রায় ১ হাজার ৩৫০ আলোকবর্ষ দূরে। তবে এটা খালি চোখেই দেখা যায়। পরিষ্কার আকাশে কালপুরুষের থ্রি স্টার বেল্ট বা তিন তারকা বলয়ের নিচে বা দক্ষিণে নীলচে আভার মতো দেখায় কালপুরুষ নীহারিকা। এই বলয়কে বাংলায় বলা হয় ‘কালপুরুষের কোমরবন্ধনী’। বন্ধনী গঠনকারী তিনটি তারা হলো ঊষা বা আলনিতাক (Alnitak), অনিরুদ্ধ বা আলনিলাম (Alnilam) ও চিত্রলেখ বা মিনতাকা (Mintaka)।
শখের জ্যোর্তিবিদ বা অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার থেকে শুরু করে জ্যোর্তিবিজ্ঞানীদের দারুণ আগ্রহের জায়গা এই নীহারিকা। হাবল কিংবা স্পিৎজার টেলিস্কোপ দিয়ে এর আগে তোলা হয়েছে এর বহু ছবি। তবে সেগুলোর কোনোটিই জেমস ওয়েব নভোদুরবিনে তোলা ছবির মতো এত স্পষ্ট ছিল না। দেখা যায়নি এত খুঁটিনাটিও। নভোদুরবিনটির নিয়ার ইনফ্রারেড ক্যামেরার সাহায্যে প্রথমবারের মতো নীহারিকাটির ধুলিমেঘ ভেদ করে উঁকি দেওয়া গেছে। দেখা মিলেছে অদেখা অনুজ্জ্বল অনেক শিশুনক্ষত্রের।
নীহারিকা থেকে নক্ষত্রের জন্ম ও বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়া বোঝার জন্য এ জায়গা বিজ্ঞানীদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ
নীহারিকাটির কেন্দ্রে আছে ট্রাপিজিয়াম নক্ষত্রপুঞ্জ। এ নক্ষত্রপুঞ্জের সবচেয়ে বড় তিনটি নক্ষত্র বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি আবিষ্কার করেন সেই ১৬৭৩ সালে। এগুলো এত বড় ও উজ্জ্বল যে এ থেকে নির্গত অতিবেগুনি বিকিরণ চারপাশের ধুলিমেঘ আলোকিত করে রাখে। ফলে পেছনে তৈরি হতে থাকা আদিনক্ষত্র বা প্রোটোস্টারগুলোকে সহজে দেখা যায় না। বিশেষ করে দৃশ্যমান আলোয়। এখানেই খেল দেখিয়েছে জেমস ওয়েব। এই নভোদুরবিনের অবলোহিত শনাক্তকারী সেন্সরের কল্যাণে প্রথমবারের মতো এগুলোর এত স্পষ্ট ছবি পাওয়া গেছে।
নীহারিকা থেকে নক্ষত্রের জন্ম ও বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়া বোঝার জন্য এ জায়গা বিজ্ঞানীদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আদিনক্ষত্রের চারপাশে কীভাবে গ্যাসীয় ধূলিকণা ঘুরপাক খায় বা গ্রহের ডিস্ক তৈরি হয়—এরকম নানা বিষয় জানা যাবে এ নীহারিকার এবারের ছবি থেকে।।
কালপুরুষ নীহারিকার এ ছবি বেশ কিছু ফিল্টার থেকে আলো নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এসব ফিল্টার আলাদা আলাদাভাবে আয়নিত উত্তপ্ত গ্যাস, আণবিক শীতল গ্যাস, হাইড্রোকার্বন, এমনকি ভারী নক্ষত্র থেকে আসা আলোও শনাক্ত করে। ছবিটিতে প্রায় ৪০ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিটের সমান আয়তনের জায়গা দেখা যাচ্ছে। পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বকে বলা হয় ১ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট। সে অনুযায়ী ছবিতে সূর্যের চারপাশে প্লুটোর কক্ষপথের আকারের সমপরিমাণ জায়গা উঠে এসেছে।
জেমস ওয়েবের তোলা এ ছবির যাবতীয় তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসা। জ্যোর্তিবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা বা গবেষণা করছেন, এমন যে কেউই তথ্যগুলো ব্যবহার করে আরও গভীর বিশ্লেষণ বা গবেষণা করতে পারবেন। আগ্রহীরা আরও বিস্তারিত জানতে মুক্ত এ বৈজ্ঞানিক প্রোগ্রামের ওয়েবসাইটে ঢুঁ মারতে পারেন।
সূত্র: ইসা, স্পেস অ্যান্ড টেলিস্কোপ ম্যাগাজিন, স্পেস ডট কম, উইকিপিডিয়া
লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা
আরও পড়ুন: