বিজ্ঞানচিন্তার চোখে বছরজুড়ে মহাকাশের সেরা ১০

মহাকাশ গবেষণায় ২০২৪ সাল ছিল বেশ ঘটনাবহুল। প্রযুক্তিগত সক্ষমতার কারণে মানুষ এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও ভালো করে দেখতে পারছে মহাবিশ্ব। জানতে পারছে মহাকাশের অজানা ইতিহাস,  মিলছে জটিল সব প্রশ্নের উত্তর। মহাকাশ নিয়ে প্রচুর গবেষণা হয়েছে এ বছর। বছরজুড়ে বিজ্ঞানচিন্তায় প্রকাশিত হয়েছে সেসব আলোচিত গবেষণা। পাশাপাশি বছর শেষে নিউ সায়েন্টিস্ট, বিবিসি সায়েন্স ফোকাস, সায়েন্স নিউজ, ডিসকভার, হাউ ইট ওয়ার্কস, সায়েন্টিফিক আমেরিকানসহ বেশ কিছু ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে সারা বছরের আলোচিত বিভিন্ন গবেষণার তালিকা। সেখান থেকে আলোচিত ১০টি গবেষণা নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো এখানে। এই তালিকায় গুরুত্ব অনুযায়ী গবেষণাগুলোর ক্রমবিন্যাস করা হয়নি। শুধু লেখার সুবিধার্থে ক্রমসংখ্য ব্যবহার করা হয়েছে।

স্পেস এক্সের নতুন ইতিহাস

রকেট নিরাপদে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে—বাক্যটি প্রায়শই শোনা যায়। তবে ২০২৪ সালে প্রথমবার রকেট নিরাপদে লঞ্চপ্যাডে অবতরণ করেছে। ১৩ অক্টোবর, নিরাপদে অবতরণ করেছে স্পেস এক্সের স্টারশিপ নভোযান। আসলে অবতরণের চেয়ে ‘ক্যাচ ধরা’ শব্দটির সাহায্যে বেশি ভালোভাবে কথাটা বোঝানো যায়। সরাসরি লঞ্চপ্যাডের রোবটিক বাহুর মুঠোয় বসে গেছে রকেটটি। এরপর ধীরে ধীরে বসে পড়েছে লঞ্চপ্যাডের নির্দিষ্ট স্থানে। মানে, উৎক্ষেপণের সময় প্যাডে রকেট যেভাবে থাকে, ঠিক সেভাবে আবার জায়গা মতো বসেছে। আগে বুস্টার রকেটগুলো মূল নভোযানকে মহাকাশে ছুড়ে দিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। বিচ্ছিন্ন এই বুস্টারগুলো সাধারণত মহাসাগরে এসে পড়ত। পরে সে অংশ ফিরিয়ে আনা হতো জাহাজের সাহায্যে। যদিও তা বেশির ভাগ সময় ব্যবহার করা যেত না। নানা কারণে এটাকে বলা হচ্ছে বিশাল অর্জন। অনেকদিন ধরেই লঞ্চ সিস্টেম পুনরায় ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে স্পেসএক্স। বলা উচিত, পরিকল্পনা করছেন স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক। এবার সেই লক্ষ্যে মাস্ক ও তাঁর প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি সফল। কারণ, শূন্যে থাকতেই এভাবে খপ করে লুফে নেওয়ার ফলে রকেটটির কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। সুন্দরভাবে পরে এটি বসে পড়েছে নির্ধারিত জায়গায়। ফলে খরচও বেঁচে গেছে অনেক। ভবিষ্যতে রকেট উৎক্ষেপণে খরচ অনেকটাই কমানো যাবে এই পদ্ধতিতে।

আরও পড়ুন

আদিম গ্যালাক্সির সন্ধান পেয়েছেন বাংলাদেশি গবেষক

সম্প্রতি জেমস ওয়েব নভোদুরবিন শিশু মিল্কিওয়ের মতো ভরের আদিম একটি গ্যালাক্সি শনাক্ত করেছে। এ গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশি গবেষক লামীয়া মওলা। এ গবেষণার মাধ্যমে আমাদের গ্যালাক্সিটিকে আরও ভালোভাবে জানার সুযোগ তৈরি হয়েছে। গ্যালাক্সিটির জন্ম বিগ ব্যাংয়ের ৬০ কোটি বছর পর। ১০টি উজ্জ্বল নক্ষত্রপুঞ্জ বা স্টার ক্লাস্টারের সমন্বয়ে গঠিত এ গ্যালাক্সির নাম দেওয়া হয়েছে ফায়ারফ্লাই স্পার্কল। জেমস ওয়েব নভোদুরবিনের সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে বিস্ময়কর এ গ্যালাক্সি শনাক্ত করেছেন বাংলাদেশি গবেষক লামীয়া মওলা ও নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির নাসা হাবল ফেলো কার্তিক আইয়ারের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী। এ গবেষক দলের সঙ্গে আরও ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স পর্যায়ের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান। গ্যালাক্সিটি বিশ্লেষণ করে মিল্কিওয়ের ছোটবেলা সম্পর্কে জানা যাবে। এই গ্যালাক্সির ১০টি নক্ষত্রপুঞ্জ ছড়িয়ে আছে প্রায় ১ হাজার আলোকবর্ষজুড়ে। এর মধ্যে গ্যালাক্সির কেন্দ্রীয় অঞ্চলে রয়েছে ৮টি নক্ষত্রপুঞ্জ, বাকি দুটি আছে দুপাশে বিস্তৃত বাহুতে। ফায়ারফ্লাই স্পার্কলের খুব কাছেই সঙ্গী হিসেবে রয়েছে আরও দুটি গ্যালাক্সি। এর প্রথমটি মাত্র ৬ হাজার ৫০০ আলোকবর্ষ দূরে। আর দ্বিতীয় সঙ্গীটি রয়েছে ৪২ হাজার আলোকবর্ষ দূরে। এই গ্যালাক্সিগুলো পরস্পরকে প্রদক্ষিণ করছে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে পড়ুন: জেমস ওয়েব টেলিস্কোপে আদিম গ্যালাক্সির সন্ধান পেলেন বাংলাদেশি গবেষক লামীয়া মওলা

ইউরোপা ক্লিপার মিশন

বৃহস্পতির চাঁদ ইউরোপা জীবনের সন্ধানে নভোযান পাঠিয়েছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। গত ১৪ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে নভোযানটি উৎক্ষেপণ করা হয়। বিজ্ঞানীদের মতে, ইউরোপায় গভীর সাগর থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ ইউরোপার পৃষ্ঠের নিচে রয়েছে পুরু বরফের আস্তরণ। দেখতে অনেকটা পৃথিবীর মেরু অঞ্চলের বরফাবৃত সাগরের মতো। বরফের ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে গভীর খাদ। তাই বিজ্ঞানীদের ধারণা, সেখানে থাকতে পারে প্রাণও। এ মিশনের আরেকটি লক্ষ্য হলো, ইউরোপায় জীবনধারণে সক্ষম জায়গা থাকলে তা খুঁজে বের করা। সে জন্য বরফ পৃষ্ঠ পরীক্ষা করা হবে এ মিশনে। ইউরোপার পৃষ্ঠের উপরিভাগের গঠন তদন্ত করে পৃষ্ঠের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করা হবে। এই নভোযান ইউরোপায় পৌঁছাতে লাগবে ৫ বছর। ২০৩০ সালের এপ্রিলে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর কথা। তবে ইউরোপায় নভোযানটি অবতরণ করবে না, বরং ওই চাঁদটির চারপাশে ঘুরবে। বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ফ্লাইবাই। ঘুরতে ঘুরতেই এটি যা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার, করবে। এ সময় তথ্য সংগ্রহের জন্য মহাকাশযানটি উন্নত প্রযুক্তির রাডার ও নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করবে। ইউরোপাকে মোট ৪৯ বার প্রদক্ষিণ করবে মহাকাশযানটি।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

চাঁদের অন্ধকার পাশের নমুনা সংগ্রহ

চাঁদ থেকে হরহামেশা নমুনা নিয়ে ফেরে নানা দেশের নভোযান। তবে সবই চাঁদের উত্তর মেরু থেকে। ১৯৬৯-৭২ সালের মধ্যে যে ১২ নভোচারী চাঁদে গেছেন, তাঁরাও চাঁদের উত্তর মেরুতে নেমেছিলেন। তবে এই প্রথম চাঁদের দক্ষিণ মেরু থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে চীন। ২৫ জুন চাঙ-ই ৬ মিশনে চীন এ সফলতা অর্জন করেছে। সাধারণরত চাঁদের একপাশ সবসময় থাকে আলোকিত এবং একপাশ অন্ধকার। আমরা সমসময় আলোকিত অংশই দেখি। ফলে অন্ধকার পাশে কি আছে, সেখানে পানি থাকার সম্ভাবনা কতটা, তা সঠিকভাবে জানা ছিল না। চাঁদের উল্টো বরফ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সত্যিই যদি সেখানে বরফ থাকে, তাহলে তা থেকে পাওয়া যাবে পানি, অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন। মানুষের বসবাসের জন্য যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি এই নমুনা পরীক্ষা করে পৃথিবীসহ বাকি গ্রহগুলোর সৃষ্টি রহস্য জানা যাবে বলেও আশাবাদী বিজ্ঞানীরা। চীনই একমাত্র দেশ, যারা চাঁদের এতটা দূরে মহাকাশযান পাঠিয়ে নমুনা সংগ্রহ করছে।

আরও পড়ুন

মহাবিশ্বের বিশদতম মানচিত্র

চলতি বছর মহাকাশের সবচেয়ে বিস্তারিত এক্সরে মানচিত্র প্রকাশ করেছেন জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক সোসাইটির জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। এ জন্য ইরোসিটা এক্সরে টেলিস্কোপ ব্যবহার করে প্রচুর ডেটা সংগ্রহ করেছেন তাঁরা। এ মানচিত্রে স্থান পেয়েছে ৭ লাখের বেশি অতি ভারী কৃষ্ণগহ্বর এবং গভীর মহাকাশের লাখো ‘এক্সোটিক’ বা দুর্দান্ত বিভিন্ন মহাজাগতিক বস্তু। সঙ্গে গ্যালাক্সিগুলোর মধ্যে দেখা গেছে অদ্ভুত রহস্যময় গ্যাসসেতু। ‘ইরোসিটা অল স্কাই সার্ভে’ নামের এ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এ সময় গবেষকেরা আকাশে ১৭০ মিলিয়ন বা ১৭ কোটির বেশি উচ্চশক্তির ফোটন কণা—যেগুলো আসলে এক্স-রশ্মির ফোটন—শনাক্ত করেন। পরে এ থেকে থেকে দূর মহাকাশের প্রায় ৯ লাখ বস্তু চিহ্নিত করেন তাঁরা। এমনটাই জানানো হয় গবেষকদের দেওয়া এক বিবৃতিতে। এ প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হলো, কয়েকটি গ্যালাক্সির মধ্যে ৪২ মিলিয়ন বা ৪ কোটি ২০ লাখ আলোকবর্ষেরও বেশি জায়গা জুড়ে বিস্তৃত প্রচণ্ড উত্তপ্ত গ্যাসসেতু। গ্যাসের এই সংযোগ সেতুকে মহাজাগতিক জালের অংশ বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। মহাকাশের এই মহাসড়ক তার আশপাশের সব গ্যালাক্সিকেই কিছু না কিছু দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। অর্থাৎ গ্যালাক্সিগুলোর গ্রহ-নক্ষত্র ব্যবস্থা তৈরিতে কাজে লাগছে এই গ্যাস। পাশাপাশি মহাকাশের সত্যিকারের শূন্যতা বা ভয়েড অঞ্চলের অবস্থানও জানান দিচ্ছে এটি স্পষ্টভাবে।

আরও পড়ুন

চাঁদে জাপানের ‘মুন স্নাইপার’

চলতি বছর শুরুর দিকে চাঁদে সফলভাবে অবতরণ করে জাপানের মুন স্নাইপার। ১৯ জানুয়ারি চাঁদের মাটিতে ল্যান্ডার অবতরণ করার সঙ্গে সঙ্গে একটা নতুন রেকর্ড করেছে জাপান। এর আগে যে চারটি দেশ চাঁদে ‘সফলভাবে’ অবতরণ করেছে, তাদের কেউ নিজেদের ইচ্ছেমতো নির্দিষ্ট স্থানে ল্যান্ডিং করাতে পারেনি। বরং তাদের ল্যান্ডার নির্দিষ্ট লক্ষ্যের কাছাকাছি কোনো জায়গায় অবতরণ করেছে। ঠিক কাছাকাছি কোন জায়গায় অবতরণ করবে, তা আগে বোঝার উপায় ছিল না। কিন্তু জাপান এই প্রথম নিজেদের ইচ্ছায় নির্দিষ্ট স্থানে ল্যান্ডার অবতরণ করাতে পেরেছে। ল্যান্ডারটির চন্দ্রপৃষ্ঠে নির্দিষ্ট লক্ষ্যের ১০০ মিটারের মধ্যে অবতরণ করে। সে জন্য এই ল্যান্ডারকে জাপান ‘মুন স্নাইপার’ আখ্যা দিয়েছে। জাপান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা বা জাক্সার ভাষ্যে, স্নাইপারের নিখুঁত গুলির মতো ল্যান্ডারটিও গিয়ে নামবে নিখুঁত লক্ষ্যে, নিখুঁতভাবে। এটা মানবজাতির জন্য এক বিশাল অর্জন। এই মিশনের উদ্দেশ্য ছিল চন্দ্রপৃষ্ঠের খনিজ পাথর পরীক্ষা করা। আধুনিক ছবি প্রসেস করার প্রযুক্তিও ছিল এই ল্যান্ডারে। সেই ছবি পরীক্ষা করে চাঁদসহ মহাবিশ্বের জন্মরহস্য বোঝা যাবে।

আরও পড়ুন

মঙ্গলের সবচেয়ে নিখুঁত মানচিত্র

চলতি বছর লাল গ্রহ মঙ্গলের রঙিন মানচিত্র প্রকাশ করেছে চীনের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা সিএনএসএ। তাদের পরিচালিত মঙ্গল অভিযান তিয়ানওয়েন-১-এর মাধ্যমে ছবি সংগ্রহ করে এ মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে। মঙ্গলের নতুন এ মানচিত্রের প্রতি পিক্সেল ধারণ করছে মঙ্গলের প্রায় ৭৬ মিটার জায়গা। এর আগে প্রতি পিক্সেলে গ্রহটির ১ কিলোমিটার বা তার বেশি অঞ্চল দেখাতে পেরেছিলেন বিজ্ঞানীরা। ১ পিক্সেলে ১ কিলোমিটার জায়গা দেখানোকে বলা হয়, ১ কিলোমিটার স্থানগত বা স্পেসিয়াল রেজ্যুলুশন। সেদিক থেকে এটা মঙ্গলের সবচেয়ে বেশি রেজ্যুলুশনের মানচিত্র। তিয়ানওয়েন-১ অভিযানের মূল মহাকাশযানে ছিল একটি অরবিটার বা কক্ষপথযান, দুটি ডিপ্লয়েবল ক্যামেরা, একটি রিমোট ক্যামেরা, একটি ল্যান্ডার ও ঝাউরং রোভার। এসবের পাশাপাশি ছিল ১৪টি অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি। এ অভিযানের লক্ষ্য, মঙ্গলের ভূ-প্রকৃতি, অভ্যন্তরীণ কাঠামো, বায়ুমণ্ডলের বৈশিষ্ট্য ও পানি অনুসন্ধান করা। প্রায় ১ হাজার ৩০০ দিন ধরে মঙ্গলে অনুসন্ধান চালাচ্ছে তিয়ানওয়েন-১। এ সময় লাল গ্রহটির কক্ষপথে অবস্থান করে মঙ্গলের প্রায় ১৪ হাজার ৭৫৭টি ছবি তুলেছে মহাকাশযানটি। সেসব ছবি ব্যবহার করে সিএনএসএর একদল গবেষক তৈরি করেছেন ওই মানচিত্র। গবেষকদলের নেতৃত্বে ছিলেন ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অবজারভেটরি চীনের (এনএওসি) অধ্যপক লি চুনলাই। সহকর্মী হিসেবে ছিলেন চীনের একাধিক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানী ও গবেষক। মানবজাতির মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসে এটি নিঃসন্দেহে একটি বড় অর্জন। ভবিষ্যতে মঙ্গলে মানুষের অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে নতুন এ মানচিত্র দারুণভাবে কাজে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন

নভোচারীদের জন্য নতুন স্পেসস্যুট

মহাকাশে মানববসতি স্থাপনের লক্ষ্যে বিজ্ঞানীরা ক্রমাগত নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছেন। তেমনই এক অভূতপূর্ব প্রযুক্তি মহাকাশচারীদের জন্য এই নতুন স্পেসস্যুট। এটি মূত্র থেকে পানি তৈরি করতে সক্ষম। নভোচারীরা দীর্ঘদিন ম্যাক্সিমাম অ্যাবজর্ভেন্সি গার্মেন্টস (ম্যাগ) স্যুট ব্যবহার করে অস্বস্তি এবং স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। তবে নতুন এই স্যুটে সে সমস্যার সমাধান করবে কিছুটা। মহাকাশে আগেও মানুষ প্রস্রাবকে পানিতে পরিণত করতে পারত। তবে সে যন্ত্র থাকত নভোযানে। এখন প্রতিটা স্পেসস্যুটেই থাকবে এই যন্ত্র। এই স্যুটই তৈরি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েইল কর্নেল মেডিসিন ও কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। স্পেসস্যুটটা ৩৮ সেন্টিমিটার লম্বা, ২৩ সেন্টিমিটার চওড়া এবং ২৩ সেন্টিমিটার উঁচু। ওজন প্রায় ৮ কেজি। নভোচারীদের পিঠে বহনের জন্য তুলনামূলক ছোট ও হালকা। নাসা ২০২৭ সালে আর্টেমিস ৩ মিশনে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মানুষ পাঠানোর চেষ্টা করছে। তাই ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে প্রতিনিয়ত উন্নত করা হচ্ছে স্পেসস্যুট।

মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে যোগাযোগ হবে আরও দ্রুত

পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া অঙ্গরাজ্যে একটি নতুন লেজার চালিত প্রকল্প শুরু হয়েছে চলতি বছর। এই প্রকল্পের সাহায্যে বিশ্ব যোগাযোগে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে বলে গবেষকদের আশা। তাঁরা জানিয়েছেন, এ প্রকল্পের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। জার্মানির একটি কৃত্রিম উপগ্রহ রয়েছে মহাকাশে, সেটি থেকে পাওয়া লেজার সংকেত সফলভাবে গ্রহণ করতে পেরেছে গ্রাউন্ড স্টেশন। ফলে স্পেস-টু-আর্থ, অর্থাৎ মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে যোগাযোগ সম্পন্ন হয়েছে আগের চেয়ে প্রায় এক হাজার গুণ দ্রুত। এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘টেরানেট’। এই প্রকল্পের নেতৃত্বে ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার (ডব্লিউএ) অ্যাস্ট্রোফোটোনিকস বিভাগের বিজ্ঞানী সাশা শেডিউই। আর প্রকল্পটি অর্থায়ন করেছে অস্ট্রেলিয়ান স্পেস এজেন্সির মুন টু মার্স ডেমোনস্ট্রেটর মিশন।

১৯৫৭ সালে স্পুটনিক-১ উৎক্ষেপণের পর থেকেই স্যাটেলাইটগুলো রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে পৃথিবীতে যোগাযোগ করে আসছে। কিন্তু এই রেডিও তরঙ্গের ফ্রিকোয়েন্সি কম হওয়ায় এগুলোর ডেটা বা তথ্য পাঠানোর ক্ষমতা ছিল সীমিত। প্রায় ৭০ বছর ধরে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে বর্তমানে ডেটা স্থানান্তরের জন্য যে পরিমাণ দ্রুত গতি প্রয়োজন, এ পদ্ধতিতে তা সম্ভব নয়। অর্থাৎ পদ্ধতিটি যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না। আসলে, আগের তুলনায় এখন ডেটা পাঠানো হয় অনেক বেশি। প্রতি মুহূর্তে হাজার হাজার উপগ্রহ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। সেগুলো থেকে বিপুল তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এই তথ্যগুলো পৃথিবীতে পাঠাতে উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি যুক্ত লেজার প্রযুক্তি হতে পারে বেশ সম্ভাবনাময় ব্যবস্থা।

১০

সাইকির উদ্দেশ্যে সাইকি

গ্রহাণুটির নাম সাইকি। গ্রহাণুর উদ্দেশ্যে যে মিশন পরিচালনা করা হয়েছে, তার নামও সাইকি মিশন। ৩ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে নভোযানটি উৎক্ষেপণ করা হয়। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বলেছে, এ অভিযানের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো পাথুরে বা গ্যাসীয় নয়, ধাতব এক জগৎ অনুসন্ধানে করছে তারা। সাইকি গ্রহাণুর অবস্থান মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের মাঝখানের অংশে। ধাতবীয় গঠন একে অনন্য করে তুলেছে। নিকেল ও লোহায় তৈরি এ গ্রহাণুর বৈশিষ্ট্য সৌরজগতের প্রথম দিকে সৃষ্ট গ্রহগুলোর কোর বা কেন্দ্রের মতো। একে তাই সৌরজগতের বিল্ডিং ব্লক বললেও ভুল হবে না। গ্রহাণুটির ব্যাস প্রায় ২২৬ কিলোমিটার। সাইকি মিশনে প্রথমবারের মতো নতুন এক লেজার যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বেতার তরঙ্গের বদলে নিয়ার-ইনফ্রারেড আলো কাজে লাগিয়ে যোগাযোগ করা হবে। ফলে আগের চেয়ে আরও দ্রুত সময়ে আরও বেশি পরিমাণ তথ্য আদান-প্রদান করা যাবে পৃথিবীর সঙ্গে। নতুন এ প্রযুক্তির উদ্ভাবক নাসা। নাম দেওয়া হয়েছে, ডিপ স্পেস অপটিক্যাল কমিউনিকেশন বা ডি-সক। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই গ্রহাণুতে যে পরিমাণে সম্পদ আছে, তার মূল্য প্রায় ১০ কুইন্টিলিয়ন ডলার। এমন গ্রহাণু পৃথিবীতে নিয়ে আসতে পারলে গোটা পৃথিবীর অর্থনৈতিক অবস্থা বদলে যাবে। এই সম্পদ পৃথিবীর সবার মধ্যে ভাগ করে দিলে মোটামুটি সবাই হয়ে যাবেন কোটিপতি। তবে আসলেই তেমন মূল্যবান সম্পদ ওই গ্রহাণুতে আছে কি না, তা ভবিষ্যতে বোঝা যাবে। ২০২৯ সালে গ্রহাণুটিতে পৌঁছাবে এই নভোযান।

আরও পড়ুন