কীভাবে পাই এক্স-রে

১৮৯৬ সালের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে আমেরিকার বিখ্যাত পিয়ারসন্স ম্যাগাজিনে বিজ্ঞানী উইলহেলম রন্টজেনের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। সাক্ষাৎকারটির কিছু অংশ এ রকম:

‘কত তারিখের ঘটনা?’

‘নভেম্বরের ৮ তারিখ।’

‘কী আবিষ্কার করেছেন?’

‘আমি একটি ক্রুকস টিউব নিয়ে গবেষণা করছিলাম। টিউবটিকে আমি কালো কার্ডবোর্ড দিয়ে চারদিক থেকে ঢেকে দিয়েছিলাম। একটি বেরিয়াম প্লাটিনো-সায়ানাইড পেপার রাখা ছিল বেঞ্চের ওপর। ক্রুকস টিউবের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎপ্রবাহ চালানোর সময় দেখলাম, বেরিয়াম প্লাটিনো-সায়ানাইড পেপারে অদ্ভুত একটি কালো দাগ পড়েছে।’

‘কিসের দাগ?’

‘এ রকম দাগ বেরিয়াম প্লাটিনো-সায়ানাইড পেপারে শুধু সরাসরি আলো প্রবেশ করলে পড়তে পারে। কিন্তু টিউব থেকে আলো আসার কোনো উপায় ছিল না। কারণ, আমি টিউবের চারদিক মোটা কার্ডবোর্ড দিয়ে ঢেকে দিয়েছিলাম। টিউবের ভেতর বিদ্যুৎ প্রবাহে স্ফুলিঙ্গ তৈরি হলেও তার কোনো আলো বাইরে আসবে না।’

‘তখন আপনি কী ভাবলেন?’

‘আমি কিছু ভাবিনি। আমি অনুসন্ধান করেছি। আমি ধারণা করতে পেরেছিলাম যে টিউব থেকেই এটা এসেছে। আমি আরও পরীক্ষা–নিরীক্ষা করলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার আর কোনো সন্দেহ রইল না। টিউবের ভেতর থেকে কোনো রশ্মি বের হয়ে এসে বেরিয়াম প্লাটিনো-সায়ানাইড পেপারে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে কালো দাগ তৈরি করেছে। আমি টিউব থেকে পেপারের দূরত্ব অনেক বাড়ানোর পরও, এমনকি দুই মিটার দূর থেকেও এই দাগ পাচ্ছিলাম। শুরুতে মনে হয়েছিল এটা একটি নতুন ধরনের অদৃশ্য আলো। এখন পরিষ্কার যে এটা সম্পূর্ণ নতুন একটা কিছু, যা আগে কখনো দেখা যায়নি।’

‘এটা কি আলো?’

‘না।’

‘এটা কি বিদ্যুৎ?’

‘না, আমাদের চেনা বিদ্যুৎ নয়।’

‘তবে এটা কী?’

‘আমি জানি না।’

প্রফেসর রন্টজেন সেদিন জানতেন না তিনি কী আবিষ্কার করেছেন। জানতেন না বলেই এই অজানা রশ্মির নাম তিনি দিয়েছিলেন এক্স-রে। কেউ কেউ তাঁর নামে রন্টজেন-রে রাখতে চেয়েছিলেন এই রশ্মির নাম। কিন্তু তা টেকেনি। এক্স-রে নামই রয়ে গেছে। [ইংরেজি উচ্চারণে উইলহেলম রন্টজেন বলা হলেও জার্মান উচ্চারণে তা বিলহেল্‌ম রন্টগেন। ইংরেজি উইলহেলম রন্টজেন থেকে আমাদের বাংলা উচ্চারণে রন্টজেন কীভাবে যেন হয়ে গেছে রঞ্জন। বাংলায় লেখা অনেক বইতে এক্স-রেকে রঞ্জন রশ্মি বলা হয়ে থাকে। কিন্তু এক্স-রের প্রতিশব্দ হিসেবে রঞ্জন-রশ্মি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।]

এক্স-রে যখন আবিষ্কৃত হয়, ১৮৯৫ সালের নভেম্বরে, তখনো কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানের অনেক মৌলিক ব্যাপারই আবিষ্কৃত হয়নি। কিন্তু এক্স-রে আবিষ্কারের পরপরই অনেক কিছু আবিষ্কৃত হয়েছে, যার ওপর দাঁড়িয়ে গেছে পুরো বিংশ শতাব্দীর পদার্থবিজ্ঞান। ১৮৯৬ সালে ফরাসি পদার্থবিজ্ঞানী হেনরি বেকরেল আবিষ্কার করলেন রেডিও-অ্যাকটিভিটি বা তেজস্ক্রিয়তা। ১৮৯৭ সালে স্যার জোসেফ জন টমসন আবিষ্কার করলেন পদার্থের মৌলিক কণা ইলেকট্রন। পরীক্ষাগারে এক্স-রে আবিষ্কার করার কৌশল জানা হয়েছে ইলেকট্রন আবিষ্কারেরও আগে। অথচ পদার্থের পরমাণুর ইলেকট্রনের মিথস্ক্রিয়ার ফলেই যে এক্স-রে উৎপন্ন হয়, তা জানা গেছে আরও অনেক বছর পর, যখন কোয়ান্টাম মেকানিকস ও পরমাণুর কোয়ান্টাম তত্ত্ব ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করতে শুরু করেছে। এক্স-রে আবিষ্কারের ১৬ বছর পর ১৯১১ সালে আর্নেস্ট রাদারফোর্ড প্রোটন আবিষ্কার করেন। তার দুই বছর পর নীলস বোর পরমাণুর গ্রহণযোগ্য কোয়ান্টাম মডেল উপস্থাপন করেন। পরমাণুর গঠন ও ইলেকট্রনের কোয়ান্টাম ধর্ম থেকে আমরা এখন এক্স-রে কীভাবে উৎপন্ন হয়, তা ব্যাখ্যা করতে পারি।

উইলহেলম রন্টজেনের ল্যাবরেটরি

এক্স-রে কী ধরনের রশ্মি, তা সেদিন অজানা থাকলেও আজ আমরা এক্স-রে সম্পর্কে অনেক কিছুই জানি। এক্স-রে অতি–উচ্চ কম্পাঙ্কের তড়িৎ-চুম্বক তরঙ্গ। এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য অত্যন্ত কম এবং শক্তি অত্যন্ত বেশি। এক্স-রের কম্পাঙ্ক ৩x১০১৬ হার্জ থেকে ৩x১০১৯ হার্জ পর্যন্ত হতে পারে। অর্থাৎ এই রশ্মিগুলো ১ সেকেন্ডে ৩x১০১৯ তরঙ্গ তৈরি করতে পারে। এই তরঙ্গগুলোর দৈর্ঘ্য অত্যন্ত কম, ১০ ন্যানোমিটারেরও কম (১ মিটারকে ১০০ কোটি ভাগ করলে এক ভাগের দৈর্ঘ্য হবে এক ন্যানোমিটার)। স্বাভাবিকভাবেই এত ছোট তরঙ্গ চোখে দেখা যায় না। এই এক্স-রে খুব সহজেই আমাদের শরীর ভেদ করে চলে যেতে পারে। যেকোনো বস্তুর একদিকে ঢুকে অন্যদিকে বের হয়ে যেতে পারে। এক্স-রে কোনো চার্জ বহন করে না। ফলে কোনো ধরনের তড়িৎ-ক্ষেত্র বা চৌম্বক-ক্ষেত্রে বাধা পড়ে না। দৃশ্যমান আলো ও এক্স-রে একই তড়িৎ-চুম্বক তরঙ্গ পরিবারের সদস্য হলেও এক্স-রে আলোর মতো প্রতিফলিত বা প্রতিসৃত হয় না। এক্স-রের কোনো ভর নেই, তাই এক্স-রে পদার্থ নয়। এক্স-রে দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না কিংবা অনুভবও করা যায় না। এক্স-রে তৈরি করে কোথাও জমা করেও রাখা যায় না। এক্স-রে তৈরি করার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবহার করে ফেলতে হয়।

প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এক্স-রের ব্যবহার অনেক বাড়ছে। এখন এয়ারপোর্টের চেকিং থেকে শুরু করে মহাশূন্যের এক্স-রে অবজারভেটরি পর্যন্ত এক্স-রের বহুবিধ ব্যবহারে আমরা অভ্যস্ত। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক্স-রের ব্যবহার যে কত প্রয়োজনীয়, তা আমরা সবাই জানি। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক্স-রের সাহায্যে যে রেডিওগ্রাফ তৈরি করা হয়, সেটাকেই আমরা এক্স-রে বলতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। পৃথিবীতে প্রতিবছর প্রায় ৪০০ কোটি মেডিকেল এক্স-রে তৈরি করা হয় রোগনির্ণয়ের জন্য। অর্থাৎ পৃথিবীতে গড়ে প্রতি দুজন মানুষের মধ্যে একজনের শরীরে কমপক্ষে একবার মেডিকেল এক্স-রে প্রয়োগ করা হচ্ছে প্রতিবছর [এক্স-রের ব্যবহার কম্পিউটার বা মুঠোফোনের ব্যবহারের চেয়েও অনেক বেশি। এই কম্পিউটার ও মুঠোফোনের আবিষ্কারকেরা এখন পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মানুষের তালিকায় একদম শুরুর দিকে থাকেন। কিন্তু এক্স-রে আবিষ্কারক বিজ্ঞানী রন্টজেন এক্স-রে আবিষ্কারের মেধাস্বত্ব বিনা মূল্যে দিয়ে দিয়েছেন পৃথিবীর মানুষের জন্য। শেষ বয়সে ভীষণ অর্থকষ্টে ভুগে হতদরিদ্র অবস্থায় ক্যানসারে মৃত্যু হয়েছে এই বিজ্ঞানীর। সে যা–ই হোক, মহৎ হতে গেলে অনেক কষ্ট স্বীকার করতে হয়]।

একেক কাজের জন্য একেকভাবে এক্স-রে উৎপাদন করা হয়, যদিও এক্স-রে উৎপন্ন হওয়ার মূলনীতি সব ক্ষেত্রে এক। দেখা যাক, চিকিৎসাবিজ্ঞানে রোগ নির্ণয় করার জন্য ডায়াগনস্টিক এক্স-রে কীভাবে উৎপাদন করা হয়। এক্স-রে উৎপাদনের জন্য কোনো ধরনের কাঁচামাল লাগে না। এক্স-রে মেশিনের যেখানে এক্স-রে উৎপন্ন হয়, সেটি একটি বায়ুশূন্য টিউব। সেই ১৮৯৫ সালে রন্টজেন যে রকম বায়ুশূন্য ক্রুকস টিউবে প্রথম এক্স-রে তৈরি করেছিলেন নিজের অজান্তে, এখন এই ১২৫ বছর পরও একইভাবে এক্স-রে তৈরি করা হয়। কম্পিউটার ও অন্যান্য উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে রেডিওগ্রাফ তৈরির পদ্ধতিটা বদলে গেছে। কিন্তু এক্স-রে উৎপাদনের পদ্ধতিতে কোনো পরিবর্তন হয়নি।

এক্স-রে টিউবের একদিকে থাকে ক্যাথোড বা ফিলামেন্ট। তার দুই সেন্টিমিটার দূরে থাকে অ্যানোড বা টার্গেট। ক্যাথোড ও অ্যানোডের মধ্যে অত্যন্ত উচ্চ ভোল্টেজের বিদ্যুৎপ্রবাহ চালনা করা হয়। এই ভোল্টেজ ৩০ হাজার ভোল্ট থেকে শুরু করে ১ লাখ ৪০ হাজার পর্যন্ত হতে পারে। এত উচ্চ ভোল্টেজ কোত্থেকে সাপ্লাই করা হয়? এক্স-রে মেশিনের সঙ্গে হাই-ভোল্টেজ জেনারেটর থাকে। সেই জেনারেটর এই ভোল্টেজ সাপ্লাই দেয়। শুধু এক্স-রে তৈরি হওয়ার সময় জেনারেটর চালু হয় এবং পুরো প্রক্রিয়ায় কয়েক সেকেন্ডের বেশি সময় লাগে না। ক্যাথোড ও অ্যানোডের মধ্যে তীব্র আকর্ষণের ফলে ক্যাথোডের ফিলামেন্ট থেকে কোটি কোটি ইলেকট্রন মুক্ত হয়ে অ্যানোডের দিকে ছুটে যায়। ভোল্টেজ যত বেশি হয়, ইলেকট্রনের গতিশক্তি তত বেশি হয়, ফলে তত বেশি জোরে গিয়ে অ্যানোডের গায়ে ধাক্কা দেয়। এই ইলেকট্রন অনেক জোরে এসে অ্যানোডের ইলেকট্রনের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে। অ্যানোডের পদার্থের পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাস অনুযায়ী ইলেকট্রনগুলো বিভিন্ন শক্তিস্তরে থাকে। সবচেয়ে ভেতরের শক্তিস্তর K কক্ষপথের ইলেকট্রনের সঙ্গে যদি ফিলামেন্ট থেকে আগত ইলেকট্রনের সংঘাত হয়, তবে K কক্ষপথের ইলেকট্রন কক্ষচ্যুত হয়। তখন সেখানে একটা খালি জায়গা তৈরি হয়। এই জায়গা পূরণ করার জন্য K কক্ষপথের বাইরের কক্ষপথ L বা M বা N কক্ষপথের ইলেকট্রন হুড়োহুড়ি করে ভেতরের দিকে যায়। বাইরের কক্ষপথের ইলেকট্রনের শক্তি ভেতরের কক্ষপথের ইলেকট্রনের শক্তির চেয়ে বেশি। তাই বাইরে থেকে ভেতরের কক্ষপথে গিয়ে জায়গা দখল করলে সেই ইলেকট্রন তার অতিরিক্ত শক্তি ত্যাগ করে। যে শক্তিটা ত্যাগ করে, সেটাই হলো এক্স-রে। এই শক্তি বহন করে কোয়ান্টাম কণা ফোটন, যাকে বলা হয় এক্স-রে ফোটন। এভাবে কোটি কোটি ইলেকট্রন মিথস্ক্রিয়া ঘটায় সেকেন্ডের কম সময়ের মধ্যে। এভাবে তৈরি হওয়া এক্স-রেকে বলা হয় ক্যারেক্টারিস্টিক এক্স-রে। এ ধরনের এক্স-রের শক্তি নির্দিষ্ট মাত্রার থাকে। আরেক ধরনের এক্স-রেও তৈরি হয়, একই সঙ্গে যার শক্তির পরিমাণ নির্দিষ্ট নয়। সেটা কীভাবে হয়? এই যে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলেকট্রন ফিলামেন্ট থেকে বের হয়ে প্রচণ্ড বেগে ঝাঁপিয়ে পড়ে অ্যানোডের গায়ে, সেখানে পরমাণুর শক্তিস্তরের কোনো ইলেকট্রনের সঙ্গে যদি সংঘর্ষ না ঘটে, তাহলে কী হয়?

ইলেকট্রনগুলো তখন সব শক্তিস্তর অতিক্রম করে পরমাণুর নিউক্লিয়াসের দিকে অগ্রসর হয়। নিউক্লিয়াস ধনাত্মক চার্জযুক্ত। ঋণাত্মক ইলেকট্রন স্বাভাবিকভাবেই তার দিকে আকৃষ্ট হবে। কিন্তু নিউক্লিয়াস তো ইলেকট্রনকে কিছুতেই ভেতরে ঢুকতে দেয় না প্রয়োজনীয় শক্তি নেই বলে। তখন ইলেকট্রনের গতি বাধাপ্রাপ্ত হয়ে প্রচুর শক্তি বের হয়ে যায়। এই বের হয়ে যাওয়া শক্তিগুলোও এক্স-রে। এগুলোকে বলা হয় ব্রামস্টারলাং (জার্মান শব্দ, যার অর্থ ভেঙে যাওয়া বিকিরণ) এক্স-রে। এ ধরনের এক্স-রের পরিমাণই মূলত বেশি থাকে। তাহলে দেখা যাচ্ছে ইলেকট্রনের সঙ্গে ইলেকট্রনের মিথস্ক্রিয়াতেই এক্স-রে তৈরি হয়। যত বেশি ইলেকট্রন, যত বেশি জোরে গিয়ে ধাক্কা দিতে পারবে, তত বেশি এক্স-রে তত বেশি শক্তি নিয়ে তৈরি হবে।

উইলহেলম রন্টজেনের স্ত্রীর হাতের এক্স-রে ছবি

ক্যাথোড থেকে বেশি ইলেকট্রন তৈরি করার জন্য সেখানে টাংস্টেন ফিলামেন্ট ব্যবহার করা হয়। কারণ, এই ফিলামেন্ট প্রায় আড়াই হাজার ডিগ্রি তাপমাত্রাতেও গলে না। আবার তার পারমাণবিক ভরও তুলনামূলকভাবে বেশি (৭৪)। এক পরমাণু টাংস্টেনে ৭৪টি ইলেকট্রন থাকে। তাহলে এক ইঞ্চি ব্যাসের ফিলামেন্টে কোটি কোটি কোটি ইলেকট্রন থাকে। আবার অন্যদিকে অ্যানোডে টার্গেট হিসেবেও ব্যবহার করা হয় টাংস্টেন। এই অ্যানোড খুবই শক্ত এবং প্রায় ১৫ সেন্টিমিটার ব্যাসের ধাতব চাকতি, যা মেশিন চালু অবস্থায় মিনিটে প্রায় কয়েক হাজারবার ঘুরতে পারে। এখানেও প্রচুর ইলেকট্রন। ফলে ফিলামেন্ট থেকে আসা ইলেকট্রনের সঙ্গে অ্যানোডের ইলেকট্রনের ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। এ রকম প্রচণ্ড সংঘর্ষের ফলে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয় এখানে। টাংস্টেন সেই তাপ সহ্য করতে পারে।

এক্স-রে থেকে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ঘটে। এই বিকিরণ যেন ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য অনেক নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। এক্স-রে টিউব থেকে উৎপন্ন এক্স-রে রোগীর শরীরে একদিকে প্রবেশ করে অন্যদিকে বের হয়ে যায়। বের হয়ে যাওয়ার সময় এক্স-রেগুলোকে ইলেকট্রনিক ডিটেক্টরে ধারণ করা হয়। সেখান থেকেই মূলত রেডিওগ্রাফ তৈরি করা হয়। এক্স-রে রোগীর শরীরের ভেতর দিয়ে আসার সময় কিছু অংশ শরীরের হাড় ও মাংসে শোষিত হয়। কী পরিমাণ শোষিত হয়েছে, তার হিসাব থেকেই মানুষের ভেতরের চিত্র তৈরি হয়। এই প্রক্রিয়াগুলো এখন কম্পিউটার প্রযুক্তির মাধ্যমে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই হয়ে যায়।

লেখক: শিক্ষক ও গবেষক, বায়োমেডিকেল ফিজিকস, আরএমআইটি, মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া