পৃথিবীতে ফিরছে আর্টেমিস

আর্টেমিস ১ মিশনের ওরিয়ন স্পেসক্রাফট চাঁদের কক্ষপথ ঘুরে পৃথিবীর উদ্দেশে রওনা দিয়েছে ১ ডিসেম্বর। স্পেসক্রাফটি পৃথিবীতে এসে পৌঁছাবে আগামী ১১ ডিসেম্বর, রবিবার। সান দিয়াগো শহরের কাছাকাছি প্রশান্ত মহাসাগরে এসে নামবে নভোযানটি। আজ ৫ ডিসেম্বর থেকে ওরিয়ন স্পেসক্রাফটের ফিরে আসা সরাসরি সম্প্রচার করবে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা।

এর আগে প্রায় আড়াই মাস প্রতীক্ষার পর চাঁদের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় আর্টেমিস ১। আর্টেমিস প্রোগ্রামের প্রথম নভোযানটি ১৬ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের প্যাড ৩৯বি থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। এর মাধ্যমে প্রায় ৫০ বছর পর নতুন করে চন্দ্রাভিযান শুরু করে মানুষ।

আর্টেমিস ১-কে বয়ে নিয়ে গিয়েছে স্পেস লঞ্চ সিস্টেম (এসএলএস)। এই মেগারকেটের এটিই প্রথম পরীক্ষামূলক মহাকাশযাত্রা। এখন পর্যন্ত মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট এটি। এর দৈর্ঘ্য ৩২২ ফুট। আর্টেমিস ১-কে সঙ্গে নিয়ে এসএলএসের এই অভিযান ছিল মানুষবিহীন। অর্থাৎ এতে কোনো নভোচারী রাখা হয়নি। তবে চারজন নভোচারী যাওয়ার মতো ব্যবস্থা রাখা হয়েছে ওরিয়ন নামে আর্টেমিসের মাথায় বসানো ‘ফেয়ারিং’ বা ভারবাহী অংশটিতে। আপাতত নভোচারীদের পরিবর্তে আর্টেমিস ১ নভোযানে পাঠানো হয় ৩টি ম্যানিকুইন বা ডল পুতুল।

আরও পড়ুন
১৬ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের প্যাড ৩৯বি থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় আর্টেমিস ১
চাঁদের কক্ষপথে ঘুরে ওরিয়ন স্পেসক্রাফটের ক্রু মডিউল আবার পৃথিবীতে ফিরে আসবে ১১ ডিসেম্বর।

ডল পুতুল পাঠানোর পেছনেও কারণ ছিল। ভবিষ্যতে আর্টেমিস ৩ মিশনে মানুষ এই মডিউল ব্যবহার করে চাঁদে যাবে। তখন ওরিয়ন মডিউলে কোনো সমস্যার সম্মুখিন হবে কি না, তা যাচাই করে দেখতে চায় নাসা ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি-ইসা। মানবদেহের কম্পনের মাত্রা ও মহাকাশে বিকিরণের প্রভাব পরিমাপ করার জন্য ওরিয়ন স্পেসক্রাফটে পাঠানো হয়েছিল এ ডল পুতুল।

চাঁদের কক্ষপথে ঘুরে ওরিয়ন স্পেসক্রাফটের ক্রু মডিউল আবার পৃথিবীতে ফিরে আসবে ১১ ডিসেম্বর। ওরিয়নের মূল অংশ বা সার্ভিস মডিউল রয়ে গেছে পৃথিবীর কক্ষপথে। ভবিষ্যতে চন্দ্রভিযানেও ব্যবহার করা যাবে এই মডিউল।

আরও পড়ুন
চাঁদের কক্ষপথে ফ্লাইবাই করছে অরিয়ন স্পেসক্রাফট
আর্টেমিস ৩ মিশনেই প্রথম কোনো নারী পা রাখবেন চাঁদে।

নাসার নেতৃত্বে পৃথিবীর ২১টি দেশের অর্থায়ন ও সহযোগিতায় পরিচালিত হচ্ছে এ চন্দ্রাভিযান। আর্টেমিসের মূল লক্ষ্য, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, অর্থনৈতিক ক্ষেত্র তৈরি করা এবং নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞানচর্চায় অনুপ্রাণিত করা। আর্টেমিস মিশনের মাধ্যমে পৃথিবী, চাঁদ এবং আমাদের সৌরজগতের উৎপত্তি ও ইতিহাস সম্পর্কে আরও অনেক নতুন তথ্য জানা যাবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।

এই মিশনের দ্বিতীয় নভোযান আর্টেমিস ২ উৎক্ষেপণ করা হবে ২০২৪ সালে। ওই স্পেসক্রাফটে থাকবেন নভোচারীরা। তাঁদের চাঁদের কক্ষপথে ঘুরে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসার কথা রয়েছে। এরপর মিশনের চূড়ান্ত নভোযান, আর্টেমিস ৩ উৎক্ষেপণ করা হবে ২০২৫ সালে। ওই মিশনেই প্রথম কোনো নারী পা রাখবেন চাঁদে। একজন নারী নভোচারী যাবেন, এটুকু নিশ্চিত করলেও কতজন পুরুষ নভোচারী ওই মিশনে যাবেন, তা এখনো নিশ্চিত করেনি নাসা। তবে সংস্থাটি জানিয়েছে, এই নভোচারীরা পা রাখবেন চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে। ইতিমধ্যে ২০২৫ সালে চাঁদে অবতরণের সম্ভাব্য ১৩টি অঞ্চল শনাক্ত করেছে নাসা। তবে আর্টেমিস ১-এর সফলতার ওপরই নির্ভর করছে আর্টেমিস ২ ও ৩-এর ভাগ্য।

লেখক: সম্পাদনা দলের সদস্য, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: নাসা ও স্পেস ডট কম