বছরজুড়ে আলোচিত ১০

বছরজুড়ে বিজ্ঞানচিন্তায় প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞানের নানা ঘটনা ও আবিষ্কারের কাহিনি। পদার্থবিজ্ঞান, মহাকাশ, জীববিজ্ঞান, প্রযুক্তিসহ বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার নানা বিষয় থেকে বাছাই করা আলোচিত বিষয়গুলো, বিজ্ঞানচিন্তার চোখে...

সৌরজগতে নতুন আগন্তুক

ধূমকেতু 3I/ATLAS
ছবি: নাসা

বছরের দ্বিতীয়ার্ধের সেরা চমক ছিল Comet 3I/ATLAS নামে একটি ধূমকেতু। এটি আমাদের সৌরজগতের বাইরের কোনো এক অজানা নক্ষত্রমণ্ডল থেকে এসেছে। জুলাই মাসে চিলির এক মানমন্দির এটি আবিষ্কার করে। এর গতি ছিল সেকেন্ডে ৫৮ কিলোমিটার। সাধারণ ধূমকেতুর গতির চেয়ে এ গতি অনেক বেশি! বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি আমাদের সৌরজগত তৈরিরও আগে থেকে মহাকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এর লেজের দিকে একটা উল্টো লেজ দেখা গেছে, যা সাধারণত দেখা যায় না। ২০২৬ সাল পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা এর ওপর নজর রাখবেন।

এ ব্যাপারে বিস্তারিত পড়ুন এখানে: সৌরজগতের বাইরে থেকে আসা ধূমকেতু নিয়ে বিজ্ঞানীরা এত উত্তেজিত কেন

প্রথমবার মঙ্গল গ্রহে বজ্রপাতের শব্দ রেকর্ড

মঙ্গলের ধূলিঝড়ের মাঝে সৃষ্ট সম্ভাব্য বজ্রপাতের একটি কাল্পনিক চিত্র
ছবি: মার্ক গার্লিক/সায়েন্স ফটো লাইব্রেরি/গেটি

পৃথিবীতে ঝড় হলে বিদ্যুৎ চমকায়, মেঘ ডাকে। মঙ্গল গ্রহেও কি তেমনটা হয়? যদি হয়ও, সেখানে তো শোনার মতো কেউ নেই! তাহলে কি সেই বজ্রপাতের শব্দকে আদৌ ‘শব্দ’ বলা যাবে? অবশেষে সেই প্রশ্নের উত্তর মিলল চলতি বছর নভেম্বরে। মঙ্গলের বুকে প্রথমবারের মতো বিদ্যুৎ চমকানোর ঘটনা রেকর্ড করেছে নাসা। তাও একবার-দুবার নয়, গত দুই বছরে অন্তত ৫৫ বার! বিজ্ঞানীরা বলছেন, মঙ্গলে বিদ্যুতের খেলা চলে ধুলোর সাহায্যে। লাল গ্রহে যখন বিশাল ধুলোঝড় বা ছোট ছোট ঘূর্ণিবাতাস তৈরি হয়, তখন ধুলোর কণাগুলো একে অপরের সঙ্গে প্রচণ্ড জোরে ঘষা খায়। এই ঘর্ষণের ফলে সেখানে স্থির তড়িৎ তৈরি হয়। আগ্নেয়গিরির ছাইয়ের মধ্যে যেমন বিদ্যুৎ চমকায়, ব্যাপারটা ঠিক তেমন। পারসিভিয়ারেন্স রোভার সেই প্রমাণ হাতেনাতে ধরেছে।

 এ ব্যাপারে আরও পড়ুন: প্রথমবার মঙ্গল গ্রহে বজ্রপাতের শব্দ রেকর্ড করল নাসা

ফিরে এল ডায়ার উলফ

ডায়ার উলফ
ছবি: জন ডেভিডসন

গেম অব থ্রোন্স-এর সেই বিশাল নেকড়ে বা ডায়ার উলফের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে? ১০ হাজার বছর আগে পৃথিবী থেকে হারিয়ে গিয়েছিল এরা। কিন্তু এই বছরেই কোলোসাল বায়োসায়েন্সেস দাবি করল, তারা জিন এডিটিং করে ডায়ার উলফের মতো দেখতে প্রাণী তৈরি করেছে! নাম রাখা হয়েছে রোমুলাস, রেমাস আর খালিসি। বিজ্ঞানীরা ধূসর নেকড়ের ডিএনএতে প্রাচীন ডায়ার উলফের বৈশিষ্ট্য বসিয়ে এদের জন্ম দিয়েছেন। যদিও গবেষকেরা বলছেন, এগুলো পুরোপুরি আসল ডায়ার উলফ নয়। তবু বিলুপ্ত প্রাণী ফিরিয়ে আনার পথে এটি এক বিশাল ব্যাপার।

আরও পড়ুন

মানুষের অঙ্গ গজাবে আবার!

ছবি: জিনোম বিসি

টিকটিকি বা সালাম্যান্ডার লেজ কাটা গেলে আবার গজাতে পারে, মানুষ কেন পারে না? বিজ্ঞানীরা এবার সেই রহস্যের খুব কাছে। তাঁরা এমন এক এনজাইম ও জিন খুঁজে পেয়েছেন, যা সালাম্যান্ডারের অঙ্গ গজাতে সাহায্য করে। মানুষের শরীরেও এই মলিকিউলার উপাদান আছে। হয়তো খুব শিগগির মানুষও হারানো অঙ্গ ফিরে পাবে! ইতিমধ্যে বানরের হৃৎপিণ্ডে ল্যাবে তৈরি স্টেম সেল দিয়ে হার্ট প্যাচ বসিয়ে সফলতাও পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুন

শুরুতেই ক্যানসারকে রুখে দেওয়া

ছবি: মিডজার্নির সাহায্যে তৈরি

অগ্ন্যাশয় বা প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসার খুবই মারাত্মক। এটি ধরা পড়ে খুব শেষ পর্যায়ে গিয়ে। কিন্তু ২০২৫ সালে বিজ্ঞানীরা এমন এক উপায় বের করেছেন, যাতে ক্যানসার হওয়ার আগেই তাকে চিনে ফেলা যায়। তাঁরা দেখেছেন, FGFR2 নামের একটি প্রোটিনকে ব্লক করে দিলে ক্যানসার হওয়ার আগের কোষগুলো মারাত্মক হতে পারে না। পারিবারিক ইতিহাস যাদের আছে, তাদের জন্য এটি এক বিশাল সুখবর।

আরও পড়ুন

 দ্য থিংকিং মডেল এবং এআইয়ের চিন্তা করার শুরু

চীনা এআই ডিপসিক
ছবি: রয়টার্স

এআইয়ের এই পরিবর্তনের পেছনে ভূমিকা রেখেছে এর কার্যপদ্ধতির পরিবর্তন। মানুষ হলে সহজেই বলা যেত, বদলে গেছে তার চিন্তাধারা। কিন্তু এআই সেই অর্থে চিন্তা করে না, যুক্তি বা প্যাটার্নের ওপর ভিত্তি করে কাজ করে। এই কাজের ধারাই বদলে গেছে ২০২৫ সালের একদম শুরুতে। হয়তো মনে আছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ঝড় তুলেছিল চীনা এআই ডিপসিক। এনভিডিয়াসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে একদম নাজেহাল করে দিয়েছিল এই এআই। এর ‘ডিপসিক আর১’ মডেলটি সে সময় গোটা বিশ্বকে চমকে দেয়। এরপর একে একে এসেছে জিপিটি-৫ এবং জেমিনাই-৩। আগের মডেলগুলো যেখানে তাড়াহুড়ো করে একটা শব্দ দেখে পরের শব্দ অনুমান করত, এই মডেলগুলো সেটা করে না। ‘রিজনিং মডেল’ বলা হয় এগুলোকে। এই রিজনিং বা চিন্তা এবং নিজের লজিক যাচাই করার জন্য এগুলো প্রথমে একটু থামে, নিজের উত্তরটা নিজেই যাচাই করে, এরপর জবাব দেয়। ফলে জটিল বেশির ভাগ কাজই প্রায় নির্ভুলভাবে করতে পারে এসব মডেল।

এ ধরনের মডেলের কার্যপদ্ধতিকে কম্পিউটারবিজ্ঞানীরা তিনটা ভাগে ভাগ করেন। প্রথম ভাগের নাম মিক্সচার অব এক্সপার্টস বা এমওই কাঠামো। একে ব্যাখ্যা করতে সহজ বাংলায় বলা যায়, ‘একজন বিশেষজ্ঞের চেয়ে একাধিক বিশেষজ্ঞের সামষ্টিক মূল্যায়ন বেশি সঠিক।’ কথাটার মানে তো বুঝতেই পারছেন, একজন নয়, একটা কাজে একাধিক বিশেষজ্ঞের মতামত নিলে সেটা সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এই মডেলগুলো সেটাই করে। প্রতিটি জটিল কাজকে অনেকগুলো ছোট ছোট ভাগে ভেঙে নেয় প্রথমে। এরপর কেবল একটি লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল বা এলএলএমের বদলে কাজ অনুসারে অনেকগুলো ভিন্ন ভিন্ন উপমডেলের সহায়তা নেয়।

মানে ধরুন, আপনার অফিসের একজন গান ভালো পারেন, একজন ভালো লিখতে পারেন, একজন ভালো আঁকতে পারেন। আরেকজন ‘সব কাজের কাজি’—তিনি একাই ভালো গাইতে পারেন, একই সঙ্গে আঁকতেও পারেন, আবার লিখতেও পারেন। কিন্তু একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনে আপনি সেই ‘সব কাজের কাজি’ একজনকে দায়িত্ব না দিয়ে তিনজনকে দায়িত্ব দিলেন যেন কাজটা ভালো হয়। এটাই করে এ ধরনের মডেলগুলো।

দ্বিতীয় ভাগের নাম ‘চেইন অব থট’ রিজনিং। অর্থাৎ পুরো কাজটা যে বিভিন্ন ভাগে ভাঙা হলো, এরপর সেটাকে ধারাবাহিকভাবে ধাপে ধাপে করা। উল্টাপাল্টা না করা বা সব একসঙ্গে করার চেষ্টা না করা। তৃতীয় ভাগের নাম ‘অটোমেটিক ভেরিফিকেশন লুপ’। অর্থাৎ মডেলটি প্রথমে একটা প্রাথমিক কাঠামো তৈরি করে। এরপর সব কর্মীর কাজকে এক করে নিজেই যাচাই করে দেখে, প্রাথমিক কাঠামোটি কতটা সঠিক। সে অনুযায়ী এটি কাঠামোটিকে নতুনভাবে তৈরি করে, গুছায় এবং এরপর সেই উত্তরটা আপনাকে দেয়।

এই যে বিভিন্ন কাজ বিভিন্ন মডেলকে ভাগ করে দেওয়া, বা একটা কাজের জন্য বিশেষভাগে তৈরি মডেল—এটাই সেই এজেন্টিক এআইয়ের ভিত্তি। কারণ এ ক্ষেত্রে, খেয়াল করে দেখুন, এজেন্টটিকে একটা বড় কাজের জন্য (ট্যুর প্ল্যান) অনেকগুলো ছোট কাজ (টিকেট কাটা, পেমেন্ট করা) করতে হয়। এভাবেই এজেন্ট ওসব কাজ করে।

আরও পড়ুন

পরমাণুর সর্বোচ্চ রেজল্যুশনের ছবি

ছবি: সায়েন্টিফিক আমেরিকান

এমন একটা সময় ছিল, যখন আলাদা করে একটা পরমাণুর ছবি তোলা ছিল অসম্ভব। এমনকি ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ দিয়ে তোলাও প্রায় অসম্ভব ছিল। কিন্তু একসময় বিজ্ঞানীরা পরমাণুর ছবি তুলতে সক্ষম হন। এখনো একক পরমাণুর ছবি তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। কারণ, আগে যত পরমাণুর ছবি তোলা হয়েছে, কোনোটাই অত স্পষ্ট নয়। সেটা সংগত কারণেই। তবে দিন যত যাচ্ছে, পরমাণুর আরও নিখুঁত ও স্পষ্ট ছবি তোলা সম্ভব হচ্ছে। ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ইচাও ঝাং এবং ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক পিনশেন হুয়াংয়ের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী একক পরমাণুর নতুন একটি ছবি তুলেছেন। এখন পর্যন্ত এটি সর্বোচ্চ রেজল্যুশনের ছবি।

এই ছবি তুলতে বিজ্ঞানীরা ইলেকট্রন টাইকোগ্রাফি নামে এক উন্নত ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপি পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। এর মাধ্যমে তাঁরা ১৫ পিকোমিটার রেজল্যুশনের ছবি তুলেছেন। রেজল্যুশনের মান যত ক্ষুদ্র হয়, ছবি তত হয় নিখুঁত। যেমন ক্যামেরার মেগাপিক্সেল যত বেশি, ছবিটাকে তত ক্ষুদ্র পিক্সেলে ভাগ করে তোলা সম্ভব। তাই ছবির রেজল্যুশনও তত ভালো হয়। ১৫ পিকোমিটার হলো পরমাণুর আকারের প্রায় ১০ ভাগের এক ভাগ। অর্থাৎ পরমাণুর ভেতরের গঠনও প্রায় স্পষ্টভাবে দেখা সম্ভব হয়েছে এই ছবিতে।

ছবি তুলতে গবেষকেরা টাংস্টেন ডাইসেলেনাইড নামের যৌগ ব্যবহার করেছেন। এই যৌগের দুটি অতি পাতলা পরমাণুস্তর আলাদা করে নেন তাঁরা। তারপর স্তর দুটি একে অপরের তুলনায় সামান্য ঘুরিয়ে বসানো হয়। এর ফলে একটি বিশেষ নকশা তৈরি হয়। একে ময়েরে সুপারল্যাটিস বলা হয়। এই সুপারল্যাটিসের ঘূর্ণনের কোণ একটু বদলালেই এদের বৈদ্যুতিক বৈশিষ্ট্যে বড় পরিবর্তন দেখা যায়। ছবি তোলাও তাই সহজ হয়।

সূক্ষ্ম রেজল্যুশন ব্যবহার করে গবেষকেরা সুপারল্যাটিসের ভেতরে একধরনের সম্মিলিত কম্পন দেখতে পেয়েছেন। এগুলোর নাম ময়েরে ফেসন। এগুলো অনেকটা ফোননের মতো। ফোনন হলো শব্দ তরঙ্গের জন্য প্রস্তাবিত কোয়ান্টাম কণা। ময়েরে ফেসনের অস্তিত্ব তাত্ত্বিকভাবে ছিল, কিন্তু এত দিন সরাসরি দেখা যায়নি। এবারই প্রথম গবেষকেরা নতুন ছবির সাহায্যে তা চাক্ষুষ করতে সক্ষম হয়েছেন। ময়েরে ফেসনসহ অন্যান্য ল্যাটিসের কম্পনের ভূমিকা আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে এই ছবি ও গবেষণা। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে ব্যবহারযোগ্য নতুন নতুন যৌগ তৈরিও সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

আরও পড়ুন

প্রথম সুপারফ্লুইড অণু

হাইড্রোজেন অণুর সুপারফ্লুইড ঘটনা
ছবি: ফিজিক্স ওয়ার্ল্ড

সুপারফ্লুইড মানে অতিপ্রবাহী। এ ধরনের পদার্থ সবচেয়ে দ্রুতগতিতে প্রবাহিত হয়। কিন্তু কঠিন পদার্থের প্রবাহী ক্ষমতা নেই। শুধু তরল ও গ্যাসীয় পদার্থের মধ্যেই এই বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। কিন্তু প্রবাহী ও অতিপ্রবাহীর মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। প্রবাহী সাধারণ কাজে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু অতিপ্রবাহী ব্যবহৃত হয় কোয়ান্টাম জগতে। সুপারফ্লুইড তৈরি অত সহজ ছিল না। আণবিক পর্যায়ের কণাদের নিয়ে এটা তৈরি করা আরও কঠিন। কিন্তু সেই কঠিন কাজটি করেছেন কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক তাকামাসা মোমোসে এবং জাপানের রিকেন অ্যাটমিক মলিকিউলার অ্যান্ড অপটিক্যাল ফিজিকস ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানী সুসুমু কুমা।

তাঁরা হাইড্রোজেন অণুর মধ্যে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। পৃথিবীর সরলতম অণু হলো হাইড্রোজেন অণু। এর অণুতে দুটি মাত্র পরমাণু থাকে। মৌলিক কণার সংখ্যাও এতে সবচেয়ে কম—দুটি প্রোটন আর দুটি ইলেকট্রন। তবু কাজটা সহজ ছিল না। তাত্ত্বিক হিসাব ছিল, ১ থেকে ২ কেলভিন তাপমাত্রায় হাইড্রোজেন সুপারফ্লুইডে পরিণত হয়। কিন্তু বাস্তবে ১৩.৮ কেলভিন তাপমাত্রাতেই হাইড্রোজেন জমে কঠিন পদার্থে পরিণত হয়। তাই এর প্রবাহী ক্ষমতা ২ কেলভিনে পৌঁছানোর অনেক আগেই নষ্ট হয়ে যায়। এ জন্য গবেষকেরা ব্যবহার করেন তরল হিলিয়ামের ন্যানোড্রপলেট বা ন্যানো আকৃতির ফোঁটা। এই হিলিয়াম ফোঁটার মধ্যে তাঁরা হাইড্রোজেন অণুর ছোট ছোট গুচ্ছ আটকে রাখেন। সেই গুচ্ছের ভেতর বসানো হয় মিথেন অণু। এরপর তাপমাত্রা কমালেও হাইড্রোজেন আর জমাটবদ্ধ হতে পারে না। তখন বিজ্ঞানীরা মিথেন অণুর ঘূর্ণন পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পারেন হাইড্রোজেন অণুগুলো সুপারফ্লুইডে পৌঁছে গেছে। আর এই কাজে সফল হতে তাঁদের লেগেছে ২০ বছর।

এটি পদার্থবিজ্ঞানের জন্য বড় ঘটনা। কণাদের আচরণ ক্লাসিক্যাল মেকানিকস থেকে ঠিক কখন কোয়ান্টাম মেকানিকসে বদলে যায়, সেই সীমারেখাটা বোঝা সম্ভব এই গবেষণার মাধ্যমে। অন্তত দুই গবেষক তা-ই মনে করছেন।

আরও পড়ুন

দানবীয় মৌলিক সংখ্যা

বর্তমানে জানা সবচেয়ে বড় মৌলিক সংখ্যাটি হলো ২১৩৬,২৭৯,৮৪১ – ১। এটি এত বড় যে লিখলে ৪ কোটিরও বেশি অঙ্ক লাগবে! একটা বইয়ে এই সংখ্যাটা ছাপতে গেলে বইটাই কয়েক হাজার পৃষ্ঠার হয়ে যাবে। কিন্তু গণিতবিদেরা এতেও সন্তুষ্ট নন। তাঁরা আরও বড় সংখ্যা চান। এ বছর গবেষকেরা সংখ্যা বিভাজন পদ্ধতি ব্যবহার করে নতুন মৌলিক সংখ্যা খোঁজার এক উপায় বের করেছেন। কোনো সংখ্যাকে কতভাবে যোগফল আকারে লেখা যায়, সেটাই এই পদ্ধতির মূল চাবিকাঠি।

আরও পড়ুন
১০

১২৫ বছরের পুরোনো সমস্যার সমাধান

ছবি: গেটি ইমেজ

১৯০০ সালে বিখ্যাত গণিতবিদ ডেভিড হিলবার্ট ২৩টি সমাধানহীন সমস্যার কথা বলেছিলেন। তার মধ্যে একটি ছিল পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলোকে গাণিতিকভাবে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো। বিশেষ করে তরল পদার্থ বা গ্যাস কীভাবে চলাচল করে, তার গাণিতিক ব্যাখ্যা। এ বছর গবেষকেরা দাবি করেছেন, তাঁরা তরল পদার্থের গতি ব্যাখ্যা করার জন্য তিনটি ভৌত তত্ত্বকে একত্রিত করতে পেরেছেন। এটা যদি সত্য হয়, তবে ১২৫ বছরের পুরোনো সেই সমস্যার সমাধানের দিকে আমরা আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবো। আবহাওয়ার পূর্বাভাস আরও নিখুঁত করতে এই সূত্র কাজে লাগতে পারে।

বিস্তারিত জানতে পড়ুন: ১২৫ বছরের পুরোনো হিলবার্টের গাণিতিক রহস্যের সমাধান

১১

শনি গ্রহের ১২৮টি নতুন চাঁদ আবিষ্কার

বিজ্ঞানীরা শনির চারপাশে আরও ১২৮টি নতুন চাঁদের সন্ধান পেয়েছেন
ছবি: নাসা

সৌরজগতের সবচেয়ে বেশি চাঁদের মালিক হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছে শনি গ্রহ। চলতি বছর মার্চ মাসে বিজ্ঞানীরা শনির চারপাশে ১২৮টি নতুন চাঁদের সন্ধান পেয়েছেন। শনির এখন মোট চাঁদের সংখ্যা ২৭৪টি। অন্যদিকে গ্রহরাজ বৃহস্পতির চাঁদ ৯৫টি। শনি গ্রহ ছাড়া আর কোনো গ্রহের ১০০টি চাঁদ নেই। তাইওয়ানের তাইপেতে অবস্থিত অ্যাকাডেমিয়া সিনিকার জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড অ্যাশটন ও তাঁর সহকর্মীরা কানাডা-ফ্রান্স-হাওয়াই টেলিস্কোপ ব্যবহার করে শনির চারপাশে এই নতুন চাঁদগুলো শনাক্ত করেছেন। তাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে শনি গ্রহের ছবি তুলেছিলেন এবং সেগুলো বিশ্লেষণ করে আগের বিজ্ঞানীদের না দেখা অনেকগুলো চাঁদ খুঁজে পান।

এ ব্যাপারে আরও পড়ুন: শনি গ্রহের ১২৮টি নতুন চাঁদ আবিষ্কার