কীভাবে বুঝবে তোমার গুণ সঠিক?

থিয়া এখন বেশ বড় বড় গুণ করে নিমেষেই। বাসায় থাকলে আমাকে দিয়েই চেক করায় ওর খাতা। কিন্তু আমি বাসার বাইরে থাকলে নিজেই ওর আম্মুর মোবাইলের ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে মিলিয়ে নেয়, উত্তর ঠিক আছে কিনা। তাই ভাবলাম, উত্তর ঠিক নাকি ভুল তা পরীক্ষা করার একটা নিয়ম ওকে শিখিয়ে দিই। গণিতবিদেরা প্রায় এক হাজার বছর ধরে এ নিয়ম ব্যবহার করে নিজের উত্তর যাচাই বাচাই করছে।

ধরো, আমরা ১২ ও ১৪ গুণ করবো। আমাদের আগের নিয়মানুসারে (যোগ করে গুণ করি) গুণটা করলেই তুমি উত্তর পাবে ১৬৮। এই গুণের সহজ কৌশল জানা না থাকলে ওপরের লিংক থেকে দেখে নিতে পারো। যাহোক, এবার তুমি তো নিয়ামানুসারে গুণ করে বের করেছো ১৬৮। কিন্তু উত্তর কি আসলেই ১৬৮ কি না তা কীভাবে বুঝবে?

এটা বুঝতে হলে প্রথমে ১২ সংখ্যাটির অঙ্ক দুটি যোগ করতে হবে। অর্থাৎ, ১+২=৩। প্রথমবার বোঝার জন্য তুমি পেন্সিল দিয়ে ১২-এর নিচে যোগফল ৩ লিখে রাখতে পারো। এরপর ১৪ সংখ্যার অঙ্ক দুটি যোগ করো। অর্থাৎ, ১+৪=৫। ১৪-এর নিচে লিখে রাখতে পারো ৫। তাহলে, আমরা দুটি নতুন সংখ্যা পেলাম। ৩ ও ৫। এবার এই অঙ্ক দুটি গুণ করতে হবে। গুণফল হলো ১৫। এই সংখ্যার অঙ্ক দুটি যোগ করলে হবে ১+৫=৬। মানে যতক্ষণ যোগফল এক অঙ্কে না পৌঁছাবে ততক্ষণ যোগ করে যেতে হবে। অর্থাৎ, যোগফল ৯-এর বেশি হলেই আবার যোগ চালিয়ে যেতে হবে।

যাহোক, আমরা পেলাম বামপাশে ৬। এবার ডানপাশে উত্তর আছে ১৬৮। এই সংখ্যাটির অঙ্ক তিনটি যোগ করতে হবে। ১+৬+৮=১৫। ১৫-এর অঙ্ক দুটির যোগফল ১+৫=৬। তাহলে উভয়পাশে উত্তর পেলাম ৬। সুতরাং, তোমার উত্তর ঠিক আছে। কয়েকবার চেষ্টা করলেই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তুমি এটা যাচাই করতে পারবে।

এই অঙ্কটা আগের নিয়মে একবার করে দেখি। গুণ করার সঙ্গে সঙ্গে মিলিয়ে দেখবো উত্তর ঠিকাছে কিনা। নিচের ছবিটি ভালো করে খেয়াল করো।

আরও পড়ুন

এখানে ১২ ও ১৪-এর গুণের ক্ষেত্রে প্রথমে দেখতে হবে, সংখ্যা দুটি ১০-এর চেয়ে কত বেশি। যথাক্রমে ২ ও ৪ বেশি। সেটা ওপরের বৃত্তে লিখলাম। এবার ১২-এর সঙ্গে ৪ বা ১৪-এর সঙ্গে ২ যোগ করলে হবে ১৬। লিখলাম সমান চিহ্নের ডানপাশে ১৬। যেহেতু রেফারেন্স নাম্বার ১০ তাই ১৬-এর পরে বসবে একটি শূন্য। মানে ১৬-কে ১০ দিয়ে গুণ করলে তো ১৬০-ই হয়। আর বৃত্তের ২ ও ৪-কে গুণ করলে পাবো ৮। ১৬০-এর সঙ্গে ৮ যোগ করলে হবে ১৬৮। ব্যস, গুণের কাজ শেষ। কিন্তু গুণটা কি ঠিক হলো কিনা তা বোঝার জন্য নিচে হালকা করে ৩ ও ৫ লেখা আছে। এতক্ষণ ওপরে যেভাবে নিয়মটা শেখালাম।

এবার চলো এরকম আরও একটা গুণ করে দেখা যাক। তাহলে বিষয়টা আরও স্পষ্ট হবে। ধরো, আমরা ১৪-কে ১৪ দিয়ে গুণ করবো।

আরও পড়ুন

১৪ মানে ১০-এর চেয়ে ৪ বেশি। বৃত্তের মাঝে লিখলাম ৪। ১৪-এর সঙ্গে ৪ যোগ করলে হলো ১৮। রেফারেন্স নাম্বার ১০, তাই ১৮-এর পাশে বসালাম ০। অর্থাৎ, ১৮০। আর বৃত্তের মধ্যে থাকা ৪ ও ৪ গুণ করলে হলো ১৬। ১৮০-এর সঙ্গে ১৬ যোগ করে পেলাম ১৯৬। এখন যাচাই করতে হবে উত্তর আসলেই ১৯৬ কি না।

প্রথমে ১৪ সংখ্যাটির অঙ্কদুটি যোগ করতে হবে। অর্থাৎ, ১+৪=৫। তাহলে দুটি ১৪-এর নিচে দুটি ৫ পেলাম। ৫-এর সঙ্গে ৫ গুণ করলে হলো ২৫। যেহেতু এটি দুই সংখ্যার তাই সংখ্যাটি অঙ্কগুলো আবার যোগ করতে হবে। ২+৫=৭। একটা উত্তর পেলাম ৭।

এবার গুণফলের অঙ্কগুলোর যোগফলও যদি ৭ হয় তাহলে বুঝতে হবে উত্তর ঠিক আছে। চলো যাচাই করে দেখা যাক। গুণফল ছিল ১৯৬। এই সংখ্যাটির অঙ্ক তিনটির যোগফল হলো ১+৯+৬= ১৬। যেহেতু দুই অঙ্কের সংখ্যা তাই আবার যোগ করতে হবে ১৬-কে। ১+৬=৭। দেখা যাচ্ছে উভয়পাশে উত্তর হয়েছে ৭। সুতরাং গুণটা ঠিকাছে।

আরও পড়ুন

শেষ করার আগে আরেকটা শর্টকার্ট শিখিয়ে দিই। ওপরে যে ১+৯+৬ যোগ করলে, এটা সংক্ষেপে যোগ করা যায়। যদি কোনো সংখ্যার মধ্যে ৯ অঙ্কটি থাকে তাহলে ৯-কে বাদ দিয়ে বাকিটা যোগ করলেই উত্তর পেয়ে যাবে। যেমন, ১৯৬-এর ৯-কে বাদ দিয়ে ১ ও ৬ যোগ করলেও হবে ৭। কিন্তু যদি ৯ না থেকে ৮ থাকে? মানে উত্তর যদি হয় ১৬৮ তাহলে কীভাবে শর্টকার্ট করবে? সেক্ষেত্রে হিসাব করতে হবে, ১, ৬ ও ৮-এর মধ্যে ১ ও ৮ যোগ করলে ৯ হয়। এবার ৯ বাদ দিলে পড়ে থাকবে ৬। অর্থাৎ, সংখ্যাটি থেকে মোট ৯ বাদ দিতে পারলে বাকি সংখ্যাটি বসিয়ে দেওয়া যাবে।

আজ তবে এখানেই শেষ করি। আগামী পর্বে দেখাব, বড় গুণের ক্ষেত্রে কীভাবে উত্তর যাচাই করবে। ততক্ষণ ভালো থাকো, সুস্থ থাকো।

লেখক: সম্পাদনা দলের সদস্য, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: স্পিড ম্যাথ ফর কিডস 

আগের সব পর্বের লিংক

প্রথম পর্ব: গুণের সহজ কৌশল

দ্বিতীয় পর্ব: গুণের আরও সহজ কৌশল

তৃতীয় পর্ব: বড় গুণের সহজ কৌশল

চতুর্থ পর্ব: বড় গুণের আরও সহজ কৌশল

পঞ্চম পর্ব: দ্বৈত গুণের সহজ পদ্ধতি

ষষ্ঠ পর্ব: যোগ করে গুণ করি

সপ্তম পর্ব: আরও যোগ আরও গুণ

অষ্টম পর্ব: যোগ ও বিয়োগ করে গুণ 

নবম পর্ব: যোগ করে বড় গুণ