বড় গুণ পরীক্ষার সহজ কৌশল 

গত পর্বে দেখিয়েছিলাম, কীভাবে বুঝবে তোমার গুণটি সঠিক। ওই পর্বটি না পড়া থাকলে লিংক (কীভাবে বুঝবে তোমার গুণ সঠিক) থেকে পড়তে পারো। তাহলে, এই পর্বটি বুঝতে সুবিধা হবে। সংক্ষেপে একবার দেখা যাক। 

ধরো, আমরা ১৩ ও ১৫ গুণ করবো। গুণফল ১৯৫। এখন বুঝবে কীভাবে, ১৩ ও ১৫-এর গুণফল ১৯৫ ঠিকই আছে? 

প্রথমে, ১৩ সংখ্যাটির অঙ্কগুলো যোগ করতে হবে। অর্থাৎ, ১+৩=৪। একইভাবে ১৫-এর অঙ্কগুলোর যোগফল ৬। এবার এই দুটি সংখ্যার অঙ্কগুলোর যোগফল দুটি গুণ করতে হবে। মানে, ১৩ থেকে পেলাম ৪ আর ১৫ থেকে ৬। এই ৪ ও ৬ এর গুণফল ২৪। আবার ২৪-এর অঙ্ক দুটির যোগফল ৬। এবার আসা যাক গুণফল ১৯৫-এ। এই সংখ্যাটির অঙ্কগুলোর যোগফল ১+৯+৫= ১৫। এবার ১৫-এর অঙ্কগুলোর যোগফল হবে ৬। তার মানে গুণফলটি সঠিক। 

এবার আসা যাক আসল কথায়। এইগুণ আমরা ক্যালকুলেটর বা হাতে কলমে করেও সমাধান করতে পারি। কিন্তু অনেক বড় সংখ্যা নিলে কী হবে? মানে ১৩ অঙ্কের একটি সংখ্যাকে ৯ অঙ্কের একটি সংখ্যা দিয়ে গুণ কি সম্ভব? অনেক ক্যাককুলেটরে সম্ভব নয়। কারণ, সাধারণ ক্যালকুলেটরে সাধারণত ৮ বা ১২ ডিজিটের সংখ্যা বসানো যায়। তাহলে ১৩ ডিজিটের গুণ কীভাবে করবে? 

আরও পড়ুন

চিন্তার কোনো কারণ নেই। আজ সেই পদ্ধতিটাই শিখাবো। তার আগে গত পর্বের টেকনিকটা একটু শিখিয়ে দিই। ধরো, ওপরের গুণ দুটির গুণফল ছিল ১৯৫। এ সংখ্যার প্রতিটি অঙ্ক যোগ করে পেয়েছি ১৫। এই ১৫ আবার যোগ করে পেয়েছিলাম ৬। টেকনিকটা হলো, দুইবার যোগ করার কোনো দরকার নেই। তোমাকে শুধু খুঁজে বের করতে হবে ৯। অথবা ৯ তৈরি করতে হবে। ৯ হলেই সেটা বাদ যাবে। আরও একটু স্পষ্ট করে  বলি। ওপরের গুণফলে ১৯৫-এর থেকে ৯ বাদ দিলে থাকে ১ ও ৫। অঙ্ক দুটির যোগফল ৬। একই উত্তর আমরা আগে পেয়েছি দুইবার যোগ করে। আবার ধরো, সংখ্যাটির মধ্যে ৯ না থাকলে কি করবো? তাতেও সমস্যা নেই। যোগ করে মোট ৯ বানিয়ে নিলেই হবে। যেমন, যদি সংখ্যাটি থাকে ২৭৫, তাহলে সংখ্যাটি থেকে ৭ ও ২-এর যোগফল ৯ হবে। এই ৯ কে বাদ দিলে থাকবে শুধু ৫। বারবার যোগ করে সমাধান করলেও উত্তর একই হবে। এভাবে করলে সময় বাঁচে এবং বারবার যোগ করতে হয় না। চলো, এবার এই পদ্ধতিটা কাজে লাগিয়ে বড় গুণ মিলিয়ে দেখি। 

আমরা ১,২৩,৪৫,৬৭৮ এর সঙ্গে ৮৯,০৫৪ গুণ করবো। ধরি, গুণফল ১০,৯৯,৩২,০৮,৯৭,৫১০। এবার আমাদের পরীক্ষা করে দেখতে হবে গুণফল সঠিক কি না। 

প্রথমে যে সংখ্যাকে গুণ করবো সেটি লক্ষ্য করি। অর্থাৎ, ১,২৩,৪৫,৬৭৮। মাথায় রাখতে হবে, যেভাবে হোক আমাদের লক্ষ্য  ৯ বানানো। এই সংখ্যাটির শুরুর অঙ্কটি ১ এবং শেষ অঙ্কটি ৮। ১ ও ৮-এর যোগফল ৯। তাহলে ১ ও ৮ বাদ দিলাম। কারণ, আগেই বলেছি ৯ হলেও সেটা বাদ দেওয়া যায়। এবার বাকি থাকলো মূল সংখ্যাটির ২,৩৪,৫৬৭। এবার দুই পাশ ৭ ও ২ মিলে হয় ৯। বাদ দিলাম। বাকি রইল ৩,৪৫৬। ৬ আর ৩ মিলে ৯ এবং ৪ ও ৫ মিলে হয় ৯। তার মানে, এখানে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। অর্থাৎ, ০ থাকলো। এছাড়াও তুমি সময় নিয়ে সংখ্যাটির সবগুলো অঙ্ক যোগ করে দেখতে পারো। তাহলে যোগফল হবে ৯। 

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

ওপরের ছবিটি ভালো করে খেয়াল করো। একই রঙের অঙ্কগুলো মিলে ৯ হয়। এভাবে মনে মনে চিন্তা করে ৯ হলেই বাদ দিয়ে দিতে হবে। 

এবার যে সংখ্যা দিয়ে গুণ করবো সেটা খেয়াল করি। অর্থাৎ, ৮৯, ০৪৫। এই সংখ্যায় একটি ৯ আছে। এটা বাদ দিলাম। ৪ ও ৫ যোগ করলে হবে ৯। এটাও বাদ দিলাম। বাকি রইল ০ ও ৮। এই দুটির যোগফল ৮। আর বাদ দেওয়া যাবে না। অথবা সবগুলো অঙ্ক দুইবার যোগ করেও অবশেষে পাবে ৮। 

তাহলে, ১,২৩,৪৫,৬৭৮ সংখ্যাটি থেকে পেলাম ০ এবং ৮৯,০৪৫ সংখ্যাটি থেকে ৮। এই দুটির গুণফল ০। এবার দেখা যাক, আমরা যে উত্তর পেয়েছি সেটার সংখ্যাগুলোর যোগফল ০ হয় কি না। যদি ০ হয় তাহলে উত্তর ঠিক আছে। ০ ব্যাতিত অন্য কোনো উত্তর হলে বুঝতে হবে গুণফল ঠিক নেই। আর যদি তুমি এভাবে বাদ না দিয়ে সময় নিয়ে যোগ করো তাহলে পাবে ৯ ও ৮। এ দুটি গুণ করলে হবে ৭২ আর অঙ্ক দুটির যোগফল হবে ৯।

গুণফল ছিল ১০,৯৯,৩২,০৮,৯৭,৫১০। এখানে মোট তিনটা ৯ আছে। এগুলো বাদ দিই। বাকি রইল ১,০৩,২০,৮৭,৫১০। এখান থেকে আগের মতো ৯ বানাতে হবে। এখানে, ১+৮= ৭+২= ৫+৩+১ = ৯। তাহলে সবই বাদ হয়ে গেল। রইল ০। অর্থাৎ, উত্তর ঠিক আছে। নিচের ছবি দেখে মিলিয়ে নাও কীভাবে ৯ বানালাম। আর যোগ করলেও সমস্যা নাই। যোগফল ৯-ই হবে। 

আরও পড়ুন

চলো এরকম আরও একটা গুণ দেখা যাক। ১৩৭ ও ৪৫৬ গুণ করতে হবে। এ ধরণের বড় গুণও কিন্তু কৌশলে মনে মনেই করে ফেলতে পারো।  ‘যোগ করে বড় গুণ’ পর্বটি দেখে শিখে নিতে পারো এ ধরণের বড় গুণ করার কৌশল। 

যাহোক, এখানে ১৩৭ সংখ্যাটির অঙ্কগুলোর যোগফল ১+৩+৭= ১১। এবার ১১ সংখ্যাটির অঙ্ক দুটির যোগফল ২। আর ৪৫৬ সংখ্যাটির অঙ্কগুলোর যোগফল ৬। কারণ, ৪ ও ৫ যোগ করলে ৯ হবে। সুতরাং ৪ ও ৫ বাদ দিলে থাকবে ৬। এবার এই দুটি সংখ্যা থেকে প্রাপ্ত ২ ও ৬-এর গুণফল ১২ এবং এর যোগফল ৩। 

এবার উত্তর দেখো। ৬২,৪৭২ সংখ্যাটির যোগফল ২১। যোগফল ৩। অর্থাৎ, উত্তর ঠিক আছে। 

কিন্তু এই পদ্ধতি কাজ করে কেন? নাহ, আজ আর নয়। আগামী পর্বে জানাবো সে কথা। আজ বরং তোমরা থিয়ার মতো বড় বড় গুণগুলো কৌশল ব্যবহার করে সমাধান করো। তারপর এই পদ্ধতিতে মিলিয়ে দেখ, তোমার উত্তর ঠিক আছে কি না।   

লেখক: সম্পাদনা দলের সদস্য, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: স্পিড ম্যাথ ফর কিডস 

আগের সব পর্বের লিংক

প্রথম পর্ব: গুণের সহজ কৌশল

দ্বিতীয় পর্ব: গুণের আরও সহজ কৌশল

তৃতীয় পর্ব: বড় গুণের সহজ কৌশল

চতুর্থ পর্ব: বড় গুণের আরও সহজ কৌশল

পঞ্চম পর্ব: দ্বৈত গুণের সহজ পদ্ধতি

ষষ্ঠ পর্ব: যোগ করে গুণ করি

সপ্তম পর্ব: আরও যোগ আরও গুণ

অষ্টম পর্ব: যোগ ও বিয়োগ করে গুণ 

নবম পর্ব: যোগ করে বড় গুণ 

দশম পর্ব: কীভাবে বুঝবে তোমার গুণ সঠিক?