পরিমাপ করতে গেলে অনেক বড় বড় স্কেল যেমন লাগে, তেমনি অনেক ছোট ছোট স্কেলও দরকার হয়। তাই এককেও এর প্রভাব পড়ে। জনপ্রিয় পরিমাপ পদ্ধতি এমকেএস ব্যবহার করে অনেক সময় সূক্ষ্ম পরিমাপের হিসাব করা কঠিন। তেমনি অনেক বড় পরিমাপ প্রকাশ করাও কঠিন হয়ে পড়ে।
ধরা যাক, একটা বাগানে অনেক গাছ আছে। গাছগুলো একটা থেকে আরেকটার দূরত্ব কয়েক মিটার। এক্ষেত্রে আপনি মিটার দিয়েই মান প্রকাশ করতে পারবেন। কিন্তু যদি বলা হয়, ঢাকার গুলিস্তান থেকে গাবতলীর দূরত্ব কত?
এমকেএস পদ্ধতিতে আপনি বলতেই পারেন ১৪০০০ হাজার মিটার।
একটা বড় সংখ্যা। কিন্তু আপনি জানেন ১ হাজার মিটারে ১ কিলোমিটার। তাই এখন সহজেই বলতে পারেন গুলিস্তান থেকে গাবতলির দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানে অংক কষার সময়, কিলোমিটার ব্যবহার করলে ঝামেলা। তাই ১৪০০০ মিটার ব্যবহারেই সুবিধা বেশি। কিন্তু এখানেও কিছু সমস্যা আছে। ১৪ হাজার সংখ্যাটা বেশ বড়। তারপরও হয়তো কাজ চালিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু সংখ্যা যদি আরও বড় হয়, তাহলে বিপদে পড়তে হবে। যেমন আকাশ পথে ঢাকা থেকে ভারতের রাজধানী দিল্লির দূরত্ব মোটামুটি ১৪০০ কিলোমিটার। এখন অংক কষতে গেলে বিরাট ঝামেলায় পড়তে হবে। ১৪০০ কিলোমিটারকে মিটারে পরিণত করতে হবে। তাহলে হিসাবটা দাঁড়াবে, ১৪০০×১০০০ =১৪,০০,০০০ মিটার। ১৪ লাখ মিটার যদি অংক করতে গিয়ে বার বার লিখতে হয়—এটা ঝামেলার কাজ, তেমনি সময়েরও অপচয়। এজন্য গণিতবিদদের কাছে সহজ পদ্ধতি আছে। তাঁরা কিছু গুণিতক ও ঘাত ব্যবহার করে যেকোনো বড় সংখ্যাকে ছোট করতে পারেন। আমরাও পারি।
একটা সংখ্যা হলো তিন কোটি অর্থাৎ 3,00,00,000। এখানে প্রথম সংখ্যা 1 নয়, 3। তবে 3-এর পর 7টা শূন্য আছে। এখন আর আগের মতো 10-এর পর ঘাত 7 বসানো সম্ভব নয়।
ধরা যাক, একটা বস্তু থেকে আরেকটা বস্তুর দূরত্ব 100 মিটার। আমারা এক শ মিটারকে গুণিতক পদ্ধতি ব্যাবহার করে লিখতে পারি 102। এখানে 102-এর মানে হলো 10×10 = 100। তেমনি 1003 = 10×10×10= 1000। এখানে 10-এর ওপরে যে সংখ্য যেমন, 2, 3… ইত্যাদিকে ঘাত বলে। কিন্তু সমস্যা হলো, বড় বড় ঘাতকে গুণ করতে যাওয়াতে। এর একটা সহজ পদ্ধতি আছে।
ধরা যাক, কোনো একটা সংখ্যা নিয়ে আপনি কাজ করবেন। সংখ্যাগুলো ধরি, 1,00,000; 10,00,000; 1,00,00,000 ইত্যাদি। এই সংখ্যাগুলো সংক্ষেপে লিখতে হলে আপনাকে তেমন কসরতের দরকার নেই। প্রথম সংখ্যাটা হলো 1 লাখ। কিন্তু অংক কষতে গিয়ে বানান করে লেখার সুযোগ নেই। তাই এটাকে সহজ করতে পারেন সহজেই ঘাত ব্যবহার করে। একে লাখে 1-এর পর পাঁচটা শূন্য আছে। তাই এর ঘাতও হবে 5। তাই আপনি এক লাখকে চোখ বুঁজে লিখে ফেলতে পারেন 105। তেমনি দশ লাখে 1-এর পর 6 টা শূন্য, এবং এক কোটিতে 7টা শূন্য আছে। তাই দশ লাখ = 10,00,000 = 106 এবং এক কোটি = 1,00,00,000 = 107। অর্থাৎ 1-এর পর যেকটা শূন্য আছে, 10-এর ওপর ততগুলো ঘাত বসিয়ে সহজেই সংখ্যাটাকে ছোট করে ফেলতে পারেন।
২.
লক্ষ করুন, এক লাখ, দশ লাখ, এক কোটি, দশ কোটি ইত্যাদি সংখ্যাগুলোর শুরুতে 1 আছে, 1-এর পরে সবগুলোতে শূন্য আছে। তাই সহজেই 1-এর পরে যতগুলো শূন্য আছে সেই সংখ্যাটাকে 10-এর ঘাত হিসেবে ব্যবহার করতে পারছেন। কিন্তু শুরুর সংখ্যা যদি 1 না হয়। তখন একটু অন্যভাবে হিসেব করতে হবে।
ধরা যাক, একটা সংখ্যা হলো তিন কোটি অর্থাৎ 3,00,00,000। এখানে প্রথম সংখ্যা 1 নয়, 3। তবে 3-এর পর 7টা শূন্য আছে। এখন আর আগের মতো 10-এর পর ঘাত 7 বসানো সম্ভব নয়। তাই বলে ভাববেন না, 10-এর জায়গায় ৩০ বসিয়ে দিলেই সমাধান হয়ে যাবে। এতে বরং বড়-সড় একটা ভুল মান এসে যাবে ফলাফলে। তারচেয়ে আমরা একটু সাধারণ গণিত করি, আমাদের উদ্দেশ্য বড় সংখ্যাটার প্রথম অংশ ১ বানানো।
আমরা লিখতে পারি:
তিন কোটি = 3,00,00,000 = 3×1,00,00,000।
এবার আমরা আমাদের আগের পদ্ধতির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছি। তাই এখন শুধু 10-এর ঘাত 7 বসিয়ে দিলেই চলবে।
তাহলে, লেখা যায় :
তিন কোটি = 3×1,00,00,000 = 3×107।
ব্যস, একটা সহজ পদ্ধতি পেয়ে গেলাম। পাঁচ কোটি হোক কিংবা ৩০ কোটি—প্রথম সংখ্যাটা এভাবে ভেঙে নিয়ে 1-এর পর যে কটা শূন্য পান, সেই সংখ্যাটাকে বসিয়ে দেবেন 10-এর ঘাত হিসেবে।
কোনো একটা সংখ্যা নিয়ে আপনি কাজ করবেন। সংখ্যাগুলো ধরি, 1,00,000; 10,00,000; 1,00,00,000 ইত্যাদি। এই সংখ্যাগুলো সংক্ষেপে লিখতে হলে আপনাকে তেমন কসরতের দরকার নেই।
পৃথিবীর বর্তমান জন্যসংখ্যা ৮০০ কোটি। এটাকে এভাবে আমরা গুণিতক বসিয়ে বসিয়ে সহজ করে ফেলতে পারি:
৮০০ কোটি = 8,00,00,00,000 = 8×1,00,00,00,000 = 8×109।
এখনো আমাদের কাজ শেষ হয়নি। সব সংখ্যা এমন কাঁটায়-কাঁটায় ১ লাখ, ৫ লাখ, ১০ কোটি—এমন রাউন্ড ফিগার হবে, এমন তো কথা নেই।
ঢাকা থেকে কক্সবাজারের স্থলপথে দূরত্ব ৩৯৭ কিলোমিটার। অর্থাৎ ৩,৯৭,০০০ মিটার।
এবার কিন্তু প্রথম সংখ্যা 3 কিন্তু পরের দুটি সংখ্যাও শূন্য নয়। তাই আগের মতো শুধু 3 আলাদা করে ফেললে কাজ হবে না। তাই আরেকটু বুদ্ধি খাঁটাতে হবে:
৩৯৭ কিলোমিটার = 3,97,000 মিটার = 3.97×1,00,000= 3.97×105 মিটার।
এটাও আসলে খুব সহজ পদ্ধতি। এবার পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব এভাবে লিখে ফেলতে পারি।
চাঁদের = 3,84,399 কিলোমিটার = 38,43,99,000 মিটার = 3.84399×10,00,00,000 = 3.84399×108 মিটার।
কিন্তু এত বড় সংখ্যা বয়ে বেড়ানো কঠিন। তাই এসব ক্ষেত্রে দশমিকের পর দুই নিয়ে হিসাব করতে হয়। তাই চাঁদের দূরত্ব = 3.84×108 মিটার লিখলেও সমস্যা হয় না।
একটা সংখ্যা হলো তিন কোটি অর্থাৎ 3,00,00,000। এখানে প্রথম সংখ্যা 1 নয়, 3। তবে 3-এর পর 7টা শূন্য আছে। এখন আর আগের মতো 10-এর পর ঘাত 7 বসানো সম্ভব নয়।
৩.
বড় সংখ্যার ক্ষেত্রে গুণিতক সহজেই বের করা যায় এভাবে। কিন্তু খুব ছোট সংখ্যার ক্ষেত্রে কী হবে? এটাও আসলে খুব কঠিন নয়। 100 মিলিমিটারে = 1 মিটার।
উলটোভাবে তাহলে লেখা যায় 1 মিলিমিটার = 1/100 মিটার = 1/102 । কিন্তু আমরা এসব ভাগ চিহ্ন রাখব না। তাই 1/102-কে লিখতে পারি 10-2। অর্থাৎ ভাগের ক্ষেত্রে হরের ঘাতকে মাইনাস লিখে লবে পরিণত করা যায়।
ন্যানোমিটার আরও ক্ষুদ্র। 1 মিটার = 1000000000 ন্যানোমিটার। অর্থাৎ 1 ন্যানোমিটার = 1/1000000000 মিটার = 1/109 মিটার = 10-9 মিটার।
ধরা যাক, একটা খুব ছোট একটা সংখ্যা = 1/3684650000। এটাকে 10-এর গুণিতকে সহজে লেখা যায়:
1/3687650000 = 1/(3.687650000×109) = 1/ (3.69×10^9) = 3.69×10-9।
মোদ্দাকথা হলো গুণিতকের কাজ হলো, অনেক বড় বা ছোট সংখ্যাকে মান ঠিক রেখে সংক্ষেপে প্রকাশ করা।