রেফারেন্স নাম্বার হিসেবে ব্যবহার করেছিলাম ১০ ও ১০০। কারণ, এ দুটি সংখ্যা দিয়ে যেকোনো সংখ্যাকে গুণ করা সহজ।
এতদিন দেখিয়েছি কীভাবে নানারকম কৌশল ব্যবহার করে সহজে গুণ করা যায়। থিয়াও এসব কৌশলে বেশ দক্ষ হয়ে উঠেছে। এখন নতুন পদ্ধতি শেখাতে হবে। রেফারেন্স নাম্বার দিয়েও আমরা আগের পর্বগুলোতে গুণ করেছি। রেফারেন্স নাম্বার হিসেবে ব্যবহার করেছিলাম ১০ ও ১০০। কারণ, এ দুটি সংখ্যা দিয়ে যেকোনো সংখ্যাকে গুণ করা সহজ। কিন্ত আমাদের আগের পর্বের সবগুলো গুণ ছিল ১০ থেকে ১০০-এর কাছাকাছি কোনো সংখ্যার মধ্যে। আমরা যদি ৩০ বা ৬০ এর কাছেকাছি কোনো দুটি সংখ্যা গুণ করতে চাই, তাহলে কি আগের কৌশল খাটবে? উত্তর, হ্যাঁ। চলো, সেরকম একটা গুণই করে দেখি।
সরাসরি গুণে যাওয়ার আগে, আরও কিছু কৌশল দেখা যাক। ধরো, আমরা কোনো সংখ্যাকে ২০ দিয়ে গুণ করবো। ২০ হলো ১০-এর দ্বিগুণ। তাহলে, প্রথমে সংখ্যাটিকে ১০ দিয়ে গুণ করে গুণফলকে দ্বিগুণ করে দিলেই ২০ দিয়ে গুণ হয়ে যাবে। আর তোমরা তো জানোই, কোনো সংখ্যাকে ১০ দিয়ে গুণ করা কতটা সহজ। শুধু যে সংখ্যাটা গুণ করবে, তার সামনে একটা শূন্য বসিয়ে দিলেই হয়ে যাবে ১০ দিয়ে গুণ।
ধরো, তুমি ২০×৭ করতে চাও। তাহলে ৭-কে প্রথমে ১০ দিয়ে গুণ করো। গুণফল পাবে ৭০। এবার এটাকে দ্বিগুণ করে দাও। এই দ্বিগুণও কিন্তু কৌশলে করা যায়। তুমি ৭০-কে ২ দিয়ে গুণ না করে বরং ৭-কে দুই দিয়ে গুণ করবে। তাহলে পাবে ৭×২=১৪। এবার ১৪-এর পরে বসিয়ে দাও বাকি শূন্যটি। ব্যস, হয়ে গেল ১৪০।
২০ দিয়ে গুণ করার এটা একটা পদ্ধতি। তুমি আরও একটি পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারো। যে সংখ্যার সঙ্গে ২০ গুণ করবে সেই সংখ্যাটিকে প্রথমে ২ দিয়ে গুণ করবে। তারপর গুণ করবে ১০ দিয়ে। যেমন, ২০-কে ৭ দিয়ে গুণ করতে চাও। তাহলে ৭-কে প্রথমে দুই দিয়ে গুণ করো। অর্থাৎ, ২০-এর থেকে ০ বাদ দিয়ে শুধু ২ দিয়ে গুণ। তারপর গুণফলের পাশে বাকি শূন্যটা বসিয়ে দাও।
এবার ধরো, তুমি ৩২×২০ করবে। দুভাবেই করতে পারো। প্রথমে, ৩২ কে ২ দিয়ে গুণ করো। তাহলে হলো ৩২×২=৬৪। এবার ৬৪-এর পাশে ০ বসিয়ে দিলেই উত্তর হলো ৬৪০। আবার এটাকে অন্যভাবেও করতে পারো। প্রথমে ৩২-কে ১০ দিয়ে গুণ করো। তাহলে, ৩২×১০= ৩২০। এবার ৩২০-কে দ্বিগুণ বা ২ দিয়ে গুণ করলে হবে ৬৪০।
দেখতেই পাচ্ছো, ২০ দিয়ে গুণ করা কত সহজ। এখনো কিন্তু ২০-কে রেফারেন্স নাম্বার ধরে গুণ করিনি। চলো, এবার ২০-কে রেফারেন্স নাম্বার ধরে ২৩×২১ গুণটা করে দেখি।
২৩ ও ২১ দুটি সংখ্যাই ২০-এর কাছাকাছি। তাই আমরা রেফারেন্স নাম্বার ধরবো ২০। ২৩ হলো ২০-এর চেয়ে ৩ বেশি এবং ২১ হলো ১ বেশি। তাই বৃত্তের মধ্যে যথাক্রমে ৩ ও ১ লিখবো।
এবার আগের মতোই কোনাকুনি যোগ করবো। ২৩+১=২৪ বা ২১+৩=২৪। এবার ২৪ কে রেফারেন্স নাম্বার ২০ দিয়ে গুণ করতে হবে। ২০ দিয়ে সহজে গুণের নিয়মটা ওপরে দেখিয়েছি। আবার দেখো।
২৪×২=৪৮
৪৮×১০= ৪৮০
তাহলে, ২৪ ও ২০ গুণ করে পেলাম ৪৮০। এবার বৃত্তের মধ্যে থাকা ৩ ও ১ গুণ করলে পাবো ৩। তাহলে ৪৮০-এর সঙ্গে ৩ যোগ করে হবে ৪৮৩। কি বেশি কঠিন মনে হচ্ছে? আসলে, এ ধরণের গুণ দেখে মনে হয় কাজ অনেক বেশি। এটা কিন্তু খাতা কলমের করার জন্য নয়। মাথা দিয়ে চিন্তা করেই উত্তর দেওয়ার জন্য। কয়েকদিন অনুশীলন করে দেখো, তোমার কাছে খুব সহজ মনে হবে।
ও হ্যাঁ, চাইলে তুমি ক্যালকুলেটর দিয়ে ওপরের গুণটা মিলিয়ে দেখতে পারো। অবশ্য আমি এ নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, ওই গুণে কোনো ভুল নেই। তোমার হাতের কাছে ক্যালকুলেটর না থাকলেও সমস্যা নেই। তুমি কিন্তু ক্যালকুলেটর ছাড়াই যাচাই করে দেখতে পারো উত্তর ঠিক আছে কি না। সে পদ্ধতিটা আগামীপর্বে দেখাবো। ততক্ষণ তোমরা ভালো থেকো। আর হ্যাঁ, গুণের আজকের কৌশলটা চর্চা করতে ভুলো না যেন।
লেখক: সম্পাদনা দলের সদস্য, বিজ্ঞানচিন্তা
সূত্র: ম্যাথ স্পিড ফর কিডস
আগের সব পর্বের লিংক
দ্বিতীয় পর্ব: গুণের আরও সহজ কৌশল
চতুর্থ পর্ব: বড় গুণের আরও সহজ কৌশল
পঞ্চম পর্ব: দ্বৈত গুণের সহজ পদ্ধতি
অষ্টম পর্ব: যোগ ও বিয়োগ করে গুণ