পৃথিবীর সব সংখ্যা ১০টি ডিজিট বা অঙ্ক দিয়ে তৈরি—০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮ ও ৯। এই অঙ্কগুলো অনেকটা বর্ণের মতো। মানে অ, আ, ক, খ-এর মতো। এই বর্ণগুলো মিলে যেমন শব্দ তৈরি করে, তেমনি অঙ্কগুলো মিলেও তৈরি করে সংখ্যা। যেমন, ক একটি বর্ণ, ল একটি বর্ণ এবং ম একটি বর্ণ। এই তিনটি বর্ণ মিলে তৈরি হয়েছে ‘কলম’ শব্দটি। তেমনি একটি ১, একটি ২ ও একটি ৩ মিলে তৈরি হয় ১২৩ সংখ্যাটি।
সংখ্যার অবস্থান দিয়ে ওই সংখ্যার মান কত, তা বোঝা যায়। আরেকটু সহজ করে বলি। ২৩ একটি দুই অঙ্কের সংখ্যা। ২৩-এর ক্ষেত্রে ২-এর মান দুইটি ১০-এর সমান। কারণ দুই আছে দশকের ঘরে। আর ৩ মানে ৩টি ১-এর সমান। কারণ ৩ আছে এককের ঘরে। তাহলে ২টি ১০ মানে ১০ + ১০ = ২০ এবং ৩টি ১ মানে ১ + ১ + ১ = ৩। অর্থাৎ, ২০ + ৩ = ২৩।
আবার ৪৩৫ তিন অঙ্কের সংখ্যা। এখানে ৪ আছে শতকের ঘরে। অর্থাৎ, ৪ × ১০০ = ৪০০। আবার ৩ আছে দশকের ঘরে। মানে ৩ × ১০ = ৩০। আর ৫ আছে এককের ঘরে, মানে ৫ × ১ = ৫। অর্থাৎ, ৪০০ + ৩০ + ৫ = ৪৩৫। আসলে সংখ্যার ক্ষেত্রে অঙ্কের অবস্থান খুব গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক সময় আমরা সুপার শপে যাই বা যাতায়াতের জন্য পাঠাও কিংবা উবার ব্যবহার করি। উবার থেকে গাড়ি নিয়ে তুমি কোথায় গেলে তোমার ভাড়া সব সময় পূর্ণ সংখ্যায় আসবে না। মানে ঠিক ১২০ টাকাই আসবে না। এর সঙ্গে কিছু পয়সাও থাকে। যেমন, ১২০.৪৩ টাকা। মানে ১২০ টাকা ৪৩ পয়সা। যদিও টাকা দেওয়ার সময় আমরা এরকম হিসাব করে টাকা দিই বা নিই না। কারণ ওই পয়সার মান আমাদের কাছে নেই বললেই চলে। যেমন, ১২০.৪৩ টাকা হলে হয়ত আমরা ১২০ টাকাই দিব। বা ১১৯.৫৬ টাকা হলেও আমরা ড্রাইভারকে ওই ১২০ টাকাই দিব। ফলে দেখা যাচ্ছে আমাদের কাছে পয়সার খুব একটা গুরুত্ব নেই।
কেন পয়সার গুরুত্ব নেই? কারণ, আমরা কখনোই পয়সা সঙ্গে নিয়ে ঘুরি না। দেশে এখন দুই টাকার কম কয়েনই চলেও না। ১ টাকা মানে ১০০ পয়সা। ফলে ১২০.৪৩ টাকার ভাড়া ঠিক ভাবে দিতে হলে ১২০ টাকা দেওয়ার পরেও ৪৩ পয়সা দিতে হবে। পয়সার যেহেতু চল নেই এখন, তাই ওই প্রসঙ্গ আপাতত বাদ দিই।
আমাদের জীবনে পয়সার গুরুত্ব খুব একটা না থাকলেও বেরসিক গণিতে কিন্তু এর গুরুত্ব অনেক। একটা পয়সার হিসাব যদি তুমি মেলাতে না পারো, তা হলে তোমার সব কষ্ট মাটি হয়ে যাবে।
এই যে ১২০.৪৩ টাকা, এটাকে পড়তে হয়—একশ বিশ দশমিক চার তিন টাকা। দশমিকের পরের সংখ্যাগুলোকে একটি একটি করে বলতে হয়। যাই হোক, এই দশমিক সংখ্যারও অবস্থান আছে। ধরো ৩. ১৪১৬ একটি সংখ্যা। এখানে ৩ মানে ৩টি এক। মানে আমাদের শুরু করতে হবে দশমিক থেকে। দশমিকের বাঁ দিকে একক, দশক, শতক… এভাবে গুণতে হবে। আবার দশমিকের ডান দিকে দশক, শতক… করে গুণতে হবে। হ্যাঁ, দশমিকের ডান দিকে দশক থেকেই শুরু হবে। একক নেই।
দশমিকের আগের ৩ মানে পূর্ণসংখ্যা ৩। কিন্তু দশমিকের পরের ১ মানে ১০ ভাগের ১ ভাগ। অর্থাৎ, ০.১। আবার দশমিকের পরের ৪ মানে শতভাগের ৪ ভাগ, অর্থাৎ, ০.০৪। আর ১ মানে হাজার ভাগের ১ ভাগ এবং ৬ মানে দশ হাজার ভাগের ৬ ভাগ।
দশমিক সংখ্যাকে ১০ দিয়ে গুণ করা খুব সহজ। দশমিককে এক ঘর ডান দিকে সরিয়ে দিলে ১০ দিয়ে গুণ করা হয়। যেমন ৩.১৪১৬-কে ১০ দিয়ে গুণ করলে গুণফল হবে ৩১.৪১৬। ১০০ দিয়ে গুণ করতে হলে দশমিককে ডান দিকে দুই ঘর সরাতে হবে। ৩.১৪১৬-কে ১০০ দিয়ে গুণ করলে উত্তর হবে ৩১৪.১৬। কিন্তু যদি ডান দিকে সরানোর মতো পর্যাপ্ত অঙ্ক না থাকে, তাহলে একটি ০ বসাতে হবে। যেমন ১.২-কে ১০০ দিয়ে গুণ করলে উত্তর হবে ১২০।
লেখক: সদস্য, সম্পাদনা দল, বিজ্ঞানচিন্তা
সূত্র: স্পিড ম্যাথ অবলম্বনে
আরও পড়ুন
দ্বিতীয় পর্ব: গুণের আরও সহজ কৌশল
চতুর্থ পর্ব: বড় গুণের আরও সহজ কৌশল
পঞ্চম পর্ব: দ্বৈত গুণের সহজ পদ্ধতি
অষ্টম পর্ব: যোগ ও বিয়োগ করে গুণ
দশম পর্ব: কীভাবে বুঝবে তোমার গুণ সঠিক?
একাদশ পর্ব: বড় গুণ পরীক্ষার সহজ কৌশল
দ্বাদশ পর্ব: রেফারেন্সে নাম্বারের সাহায্যে গুণ
ত্রয়োদশ পর্ব: রেফারেন্সে নাম্বারের সাহায্যে আরও গুণ
চতুর্দশ পর্ব: রেফারেন্স নাম্বারের সাহায্যে ছোট গুণ
পঞ্চদশ পর্ব: রেফারেন্স নাম্বারের সাহায্যে ছোট ও বড় গুণ
ষষ্ঠদশ পর্ব: রেফারেন্স নাম্বার ৫০ ধরে গুণ